সোমবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১২

মুক্তির মন্দির সোপান তলে...


প্রতিদিন খবরের কাগজের প্রথম পাতায় চোখ বুলিয়ে দিনের কাজ শুরু করি। কাগজে কী দেখি- পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু, ফ্লাইওভার ধ্বসে নিরীহ মানুষের প্রাণহানি, দুই শীর্ষনেত্রীর পারস্পরিক তর্কযুদ্ধ- কাদা ছোড়াছুড়ি, প্রকল্পে দুর্নীতি, পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ-সমাবেশ, পুলিশের রণপ্রস্তুতি এরপর হরতাল-পিকেটিং-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ-গ্রেপ্তার- এমনি নানা দুঃসংবাদ, আঘাত-প্রতিঘাতের ধ্বংসকাব্যে ঠাসা প্রতিদিনের কাগজের পাতা। ভীতি, অনিশ্চয়তা আর দুর্ভাবনায় ঘেরা তাই প্রতিটি সকাল। কখনো কখনো ভাবি- একটু আলো কিংবা ভালোর ঠিকানা বুঝি কাগজওয়ালাদের জানা নেই।
এত কিছুর মধ্যেও প্রতি বছর ডিসেম্বর মাস এলে আমরা ‘বিজয়’ এর কথা ভাবি। বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা- শব্দগুলো আমাদের সামনে জীবন্ত হয়ে ওঠে নতুন দ্যোতনা নিয়ে। আনন্দে উদ্বেল হয়ে কিংবা শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্মরণে আমরা গেয়ে উঠি বিজয়ের গান- পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল... মুক্তির মন্দির সোপান তলে...।
হ্যাঁ, এরই মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ৪১ বছর কেটে গেছে। দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা, যোগাযোগ, শিল্প-বাণিজ্য, সাহিত্য-সংস্কৃতিসহ সর্বত্র আমূল পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। সময়ের সঙ্গে আমরা অনেকখানি বদলে গেছি। তবু ডিসেম্বর মাস এলে যে প্রশ্নটা সবচেয়ে জোরালো হয়ে উঠে- শৃঙ্খল মুক্তির যে দুর্বার শপথে একাত্তরে আমরা জীবনবাজি রেখেছিলাম, ত্যাগ করেছিলাম নিজের সর্বস্ব; সেই লক্ষ আদৌ অর্জিত হয়েছে কি? আমরা কি পেয়েছি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, শিক্ষা-সাংস্কৃতিক মুক্তি, জীবনের স্বাভাবিক নিরাপত্তার গ্যারান্টি? আমাদের সার্বিক অবস্থান আজ কোথায়? আমরা কি বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছি? পরনির্ভরতা আর বিদেশি ঋণের বোঝা কেন আমাদের কাঁধে চেপে আছে? সার্বিক দুরবস্থার উত্তরণের আকাক্সক্ষা আমাদের মধ্যে আছে কি? নাকি রাজনীতির নামে আমরা কেবল হানাহানি, স্বার্থলিপ্সা, আত্মচিন্তা আর সংঘাতে লিপ্ত থেকেছি? 

পাখির ভিড়ে


গাছের ডালে টুনটুনিরা
ডাকে মধুর সুরে
কোকিল পাখির মিষ্টি গানে
ঘুম ভেঙে যায় ভোরে।
বাইরে দেখি বন-বাগানের
সবুজ গাছে গাছে
নাম না-জানা হাজার পাখি
গান করে আর নাচে।
স্বাধীন পাখি নীল আকাশে
ডানা মেলে উড়ে
কেউ বা আবার গানের পাখি
মারে বুলেট ছুঁড়ে।
সন্ধে হলে সকল পাখি
ফিরে আপন নীড়ে
আমার ভীষণ ইচ্ছে করে
হারাই ওদের ভিড়ে।

বৃষ্টি নামের বোনটি আমার



ছয় বছরের বোনটি আমার
নাম হলো তার বৃষ্টি
এক-দুটো নয় একসাথে সে
চায় চকোলেট বিশটি।

হয় সে খুশি যখন নামে
রিমঝিমিয়ে বিষ্টি
চাঁদ-তারা-মেঘ ফুল-পাখিরাও
আমার বোনের ইষ্টি।

মনের মতো খেলনা পেলে
দেয় সে হেসে মিষ্টি
তার প্রতি রয় সদাই আমার
ভালোবাসার দিষ্টি।

বৃহস্পতিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১২

রূপসী নীল অপরাজিতা

লাল, সাদা, বেগুনি, নীল, গোলাপি এমনি আরো কত রঙে রঙিন আমাদের পুষ্প-নিসর্গ! এর মধ্যে নীল ফুলের কথা যদি বলি- প্রথমেই আসে রূপসী অপরাজিতার নাম। লতানো গাছে সবুজপাতার কোলে এক টুকরো প্রগাঢ় নীলের সম্ভাষণ আপনার ভাললাগার অনুভূতিকে নিমেষে ছুঁয়ে যাবে। ফুলে কোনো গন্ধ নেই, তবু রঙের বাহার আর মিষ্টি শোভায় অনন্য সে অপরাজিতা।
একটু খেয়াল করলে দেখবেন, অপরাজিতা গুচ্ছে ফোটে না। পাতাভর্তি লতার ফাঁকে ফাঁকে এক একটি ফুল ফোটে, যেন এরা একা থাকতে ভালবাসে। আর তাতে আপনার ভাবুক মন আনমনে গেয়ে উঠতে পারে নজরুলের গান:

আমি বিজন বনের অপরাজিতা
আমার কথা কহি গানে......। 
গাঢ় নীল ফুলটিকে ডাকা হয় নীলকণ্ঠ নামেও। নীল ছাড়াও চোখে পড়ে সাদা এবং হালকা বেগুনি রঙের ফুল। ফুলের ভেতরের দিকটা সাদা বা ঈষৎ হলুদ রঙের হয়ে থাকে। বাড়ির আঙিনায়, টবে বা বাগানে সাধারণত এ গাছ লাগানো হয়। দেখা যায় বুনো অপরাজিতাও। আশেপাশের উঁচু গাছ বেয়ে এটি তরতর করে বেড়ে ওঠে, ফুলে-পাতায় বিকশিত হয়। হালকা সবুজ রঙের পাতার গড়ন উপবৃত্তাকার। ঝোপজাতীয় গাছে প্রায় সারা বছর ফুল ফোটে। বহুবর্ষজীবী এ লতা ২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়।
অপরাজিতার বৈজ্ঞানিক নাম ক্লাইটোরিয়া টের্নাটেয়া (Clitoria ternatea). ক্লাইটোরিয়া শব্দটি এসেছে গ্রিক ক্লেটোরিস থেকে, ফুলের আকার বোঝানোর জন্য। আর টের্নাটেয়া এসেছে ইন্দোনেশিয়ার মালাক্কা উপসাগরের টের্নাট দ্বীপের নামানুসারে, যেখান থেকে এই ফুলটি সংগ্রহ ও নামকরণ করা হয়। ইংরেজি নাম বাটারফ্লাই পি বা ব্লু পি।
কেবল সৌন্দর্যে নয়, ওষুধি গুণেও অতুলনীয় অপরাজিতা। এর ফুল, পাপড়ি, মূল ও গাছের লতা নানা ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহার্য। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে অপরাজিতা পবিত্র উদ্ভিদ। শারদীয় দুর্গোৎসবে ষষ্ঠীতে এবং বিজয়া দশমীর পুজোয় এ ফুল ব্যবহারের প্রচলন আছে। রূপকথার গল্পেও আছে অপরাজিতার নাম, পরিদের কাছে আংটি হিসেবে ছিল ফুলটির ব্যবহার। 
ঢাকায় রমনা পার্ক, শিশু একাডেমীর বাগান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকাসহ বিভিন্ন বাগানে অপরাজিতা ফুলের দেখা মেলে। ঢাকার যাপিত জীবনে সবুজের দীনতা এবং জায়গার স্বল্পতায় ছাদবাগানে এবং টবে অপরাজিতা গাছ লাগানো যেতে পারে।

ছবির ক্যাপশন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদ্দীন হলের বাগানে অপরাজিতা ফুল  >> লেখক

লাল রঙ্গনে ভরা অঙ্গন

বাংলার ঋতুবৈচিত্র্যে প্রকৃতি প্রতিনিয়ত তার রূপ বদল করে। সময়ের পালাবদলে গ্রীষ্ম, বর্ষা থেকে বসন্ত_ ছয়টি ঋতুভেদে প্রকৃতি নিজেকে গড়ে নেয় আপন রূপে, নতুন সাজে। ফুলে-ফলে, পত্র, বৃক্ষ-তরুলতায় প্রকাশ পায় এই পরিবর্তন, নতুনের স্পন্দন। আবার বছরব্যাপী প্রকৃতিতে চেনা রঙে, একই ঢঙে বিরাজ করে এমন অনুষঙ্গও বিরল নয়। আমাদের পুষ্প-উদ্যানে সারা বছর সুরভি ছড়ানো ফুলের মধ্যে একটি হলো 'রঙ্গন'। সবুজ পাতার কোলে গুচ্ছ গুচ্ছ লাল ফুলের সৌন্দর্য বড়ই দৃষ্টিনন্দন। বাংলাদেশের প্রায় সব বাগানে রঙ্গনের দেখা মেলে। আকর্ষণীয় সৌন্দর্যে, বর্ণবৈচিত্র্যে রঙ্গন বাগানের শোভা বৃদ্ধি করে।
ঘনবিন্যস্ত পাতার কোলে গাঢ় লাল রঙের পুষ্পমঞ্জরিতে অসংখ্য ফুলের সমারোহ কার না দৃষ্টি কাড়ে! রঙ্গন ফুল আকারে ছোট, নলাকৃতি। তারার মতো চারটি পাপড়ির বিন্যাসে অনুপম রঙ্গনের মাধুর্য। বিশেষ করে, থোকায় থোকায় সদ্য ফোটা লাল ফুলের উচ্ছ্বাস পুষ্পপ্রেমীর মনে জাগায় ভালোলাগার এক অপার্থিব অনুভূতি।
বাগানে সাধারণত লাল রঙের ফুলই বেশি দেখা যায়। লাল ছাড়াও রঙ্গন গোলাপি, হলুদ ও সাদা রঙের হয়ে থাকে। রঙ্গনগাছ আকারে ছোটখাটো, ঝোপজাতীয়, ডালপালাগুলো লতানো। ঘন চিরসবুজ পত্রনিবিড় এ গাছ দুই থেকে ছয় মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। ঢাকায় শাহবাগের পাবলিক লাইব্রেরি চত্বর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক, পান্থপথের পান্থকুঞ্জ, কার্জন হলসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় রঙ্গন চোখে পড়ে। বাগান ছাড়াও বাড়ির আঙিনা, সড়কদ্বীপ ও সড়ক-বিভাজকে রঙ্গনগাছ লাগাতে দেখা যায়।
লাল রঙের রঙ্গন ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম 'ইক্সোরা কক্সিনিয়া' (Ixora coccinia)। এটি মূলত এশীয় অঞ্চলের প্রজাতি। সহজেই এর চাষ করা যায়। পরিণত গাছের ডাল নিচ থেকে কেটে রোপণ করে নিয়মিত যত্ন নিলে শিকড় গজায়। এ ছাড়া কলম করেও বংশবিস্তার করা যায়।
প্রায় সারা বছরই ফুল ফোটে বলে রঙ্গন বাগানের বর্ণবৈচিত্র্যে এক ভিন্ন সুষমা যোগ করে। তাই পুষ্প-নিসর্গের শোভাবর্ধনে পরিকল্পিত রঙ্গনবীথি গড়ে তোলা যেতে পারে। 
(০৬ নভেম্বর, ২০১২ দৈনিক সমকাল-এ প্রকাশিত) 

হেমন্তের শোভা হিমঝুরি

এই হেমন্তে আপনি যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান গ্রন্থাগারের ফটকে গিয়ে দাঁড়ান, ঘন সবুজ পাতাময়, আকাশছোঁয়া একটি গাছ আপনার চোখে পড়বে। গাছের তলায় দেখবেন ঝরা ফুলের মেলা। বিশেষ করে, সাতসকালের হিম বাতাসে সাদা ফুলের প্রাচুর্য, সঙ্গে মিষ্টি সুরভি আপনাকে আকুল করবে মুহূর্তেই। একটু অপেক্ষা করলে পেতে পারেন বাতাসের স্পর্শে ঝরতে থাকা গুঁড়ি গুঁড়ি ফুলের সম্ভাষণও।
বলছি হিমঝুরির কথা। হিমের দিনে সাদা হিমের মতোই যেন ফুলগুলো ঝরে পড়ে। সৌন্দর্য-মুগ্ধ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাই একে ডেকেছেন হিমঝুরি নামে। হিমঝুরি রাতে ফোটে এবং গন্ধ বিলোয়।
হিমঝুরি (Millingtonia hortensis) সুউচ্চ, লম্বাটে ধরনের চিরসবুজ গাছ। ২০০ বছরেরও আগে মিয়ানমার থেকে এসে এটি আমাদের উদ্যানে জায়গা করে নিয়েছে। এই গাছের ডালপালাগুলো ছড়ানো-ছিটানো, আগা নিচের দিকে নুয়ে থাকে। ডালের মাথায় অসংখ্য মঞ্জরিতে
বিক্ষিপ্তভাবে ফুল ফোটে। নলাকার সাদা ফুলের মাথায় পাঁচটি ছোট পাপড়ির একেকটি ফুল শুভ্র পাপড়ির মতো। আর নিচের দিকে ঝুলে থাকা ফুলগুলো বাতাসের পরশে যেন নেচে ওঠে বারবার। সরু, লম্বা ফুল এক ফুট বা তারও বেশি বড় হয়। এর বীজ হালকা ও পাখাযুক্ত বলে বায়ুর মাধ্যমে আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। হিমঝুরি গাছ ছায়াঘন নয় বলে রাস্তার ধারে লাগানোর অনুপযুক্ত। কাঠ হালকা ও মসৃণ, আসবাব তৈরিতে ব্যবহারযোগ্য। নিমগাছের সঙ্গে সাদৃশ্য এবং বলিষ্ঠ উচ্চতার জন্য হিমঝুরি আকাশনিম নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম 'ইন্ডিয়ান কর্ক ট্রি'।
মাধুর্যে, কমনীয়তায় অপূর্ব হওয়া সত্ত্বেও গাছটি ঢাকায় বেশ দুষ্প্রাপ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান গ্রন্থাগারের সামনের গাছটি ছাড়া শিশু একাডেমীর বাগান এবং বলধা গার্ডেনসংলগ্ন খ্রিস্টান কবরস্থানে কয়েকটি গাছ চোখে পড়ে। হেমন্তের শিশির-ভেজা প্রকৃতিতে ফুলের সংখ্যা অনেকটা সীমিত। তাই আমাদের উদ্যানের বৈচিত্র্য ও শোভাবর্ধনে এ গাছের অধিকতর বিস্তার হওয়া দরকার। রূপে-গন্ধে-সৌন্দর্যে অতুলনীয় হিমঝুরির প্রাচুর্য হৈমন্তিক পুষ্প-নিসর্গে নতুন মাত্রা যোগ করবে নিঃসন্দেহে। 

             (২০ নভেম্বর, ২০১২ দৈনিক সমকাল-এ প্রকাশিত)

শনিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১২

বাদল দিনের চালতা ফুল

বাদল দিনের চালতা ফুল 


একপশলা বৃষ্টির পর সতেজ বৃক্ষরাজি দেখার জন্য হাজির হলাম উদ্যানে। মাথার ওপরে তখন ঝলমলে নীলাকাশ। বৃক্ষ-তরুলতায় বৃষ্টি-ধোয়া উচ্ছ্বাস। পাতার কোলে বিন্দু বিন্দু জলের সৌন্দর্য। শান্ত সজীব প্রকৃতির এমন মুহূর্তে চালতা গাছের দিকে তাকাতেই থমকে গেল দৃষ্টি। ঘন সবুজ পাতার কোলে সদ্য ফোটা ফুলের মায়াবী হাসিতে ভরে গেল মন। মুগ্ধ চোখে ফুলের দিকে চেয়ে কেটে গেল নিষ্পলক আরও কিছুক্ষণ। চালতা ফুলের রূপে মোহিত কবি এমন কোনো দিনেই হয়তো লিখেছেন-
আকাশ নীলের তারাখচা পথে বৃষ্টি পড়ে/
চালতা ফুলে ফলের বাগান মদির করে। (বিষ্ণু দে)
চালতা ফুলের কমনীয়তা কদম-কেয়া-মালতীর চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। রূপবৈচিত্র্য, সৌকর্যে বাগানের যে কোনো ফুলের সঙ্গে এটি তুলনীয়। কিন্তু আমাদের ভোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে চালতা ফুলের মাধুর্য বরাবরই উপেক্ষিত থেকেছে। তাই ফল হিসেবেই লোকসমাজে এর যেটুকু পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা।
বর্ষা ঋতুর প্রথম ভাগে চালতা ফুল ফুটতে শুরু করে। আকারে বেশ বড়। দুধসাদা পাঁচটি মোটা পাপড়ি আর হলদে পরাগকেশরের সমাহার বড়ই দৃষ্টিনন্দন। ১৫-২০টি গর্ভকেশর তারার মতো সাজানো। গঠনবৈশিষ্ট্যে এটি ম্যাগনোলিয়ার ঘনিষ্ঠ। রূপসী চালতা ফুল বর্ষার বাতাসে ছড়ায় মৃদু সৌরভ। চিরসবুজ চালতা গাছ আকারে মাঝারি, বাকল লালচে ও মসৃণ। ডালপালা ওপরের দিকে ছড়ানো-ছিটানো। চালতা গাছের পাতার বিন্যাস এবং বৈচিত্র্যও দেখার মতো। টিয়া-সবুজ রঙের পাতা দীর্ঘাকৃতি, সমান্তরাল শিরায় পরিপূর্ণ এবং পাতার কিনার খাঁজকাটা। ফুলের পাপড়ি ঝরে যাওয়ার পর বৃতি একসময় ফলে পরিণত হয়। ফলের রঙ সবুজ, প্রায় গোলাকার, পাতার ফাঁকে বোঁটায় ঝুলে থাকে। শর-হেমন্তে ফল পাকে। ফলের স্বাদ টক-মিষ্টি বলে আচার-চাটনি-জেলি হিসেবে এটি বেশ উপাদেয় ও মুখরোচক। বিশেষ করে কাঁচা চালতার আচারের স্বাদ মনে এলে যে কারও জিভে জল আসে। চালতার কাঠ শক্ত ও টেকসই। নৌকা ও বন্দুকের বাট তৈরিতে ব্যবহারযোগ্য। বাকল ও পাতা নানা কাজে লাগে। তাছাড়া পেটের পীড়া ও জ্বর নিরাময়েও উপকারী।
আমাদের দেশের সর্বত্র চালতা গাছ দেখা যায়। বাড়ির আঙিনায় কিংবা বনে-জঙ্গলে অনাদরে দু'চারটা গাছ থাকাও বিচিত্র নয়। সুপরিকল্পিত বীথি না থাকলেও ঢাকায় বিচ্ছিন্নভাবে কিছু গাছ চোখে পড়ে। বলধা গার্ডেন, রমনা পার্ক, মুক্তাঙ্গন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চালতা গাছের দেখা মেলে। ভারতবর্ষ চালতার আদি নিবাস। বাংলাদেশ ছাড়াও নেপাল, শ্রীলংকা, আসাম ও মালয়ে প্রচুর পরিমাণে জন্মে। বৈজ্ঞানিক নাম ডিলেনিয়া ইন্ডিকা, ইংরেজি নাম এলিফ্যান্ট অ্যাপল। ফুল ও ফল ছাড়াও চালতা গাছ বৃক্ষ হিসেবে সৌন্দর্যে অনুপম। তাই শোভা বর্ধনের জন্যও এটি বাগানে লাগানো যেতে পারে।
  (আগস্ট, ২০১২ দৈনিক সমকাল-এ প্রকাশিত) 

বুধবার, ৮ আগস্ট, ২০১২

ইচ্ছের নীল পাখি



ঘড়িতে পাঁচটা বাজতে আট মিনিট বাকি। এমন সময় সাকিবের ঘুম ভেঙে গেল। ঘুমলাগা চোখে সে পাশের কক্ষে উঁকি দিয়ে দেখে আব্বু-আম্মু এসেছে কি না। না, আসেনি। দূর থেকে অস্পষ্ট টুংটাং শব্দ শোনা যাচ্ছে। হয় তো রান্নাঘরে রীনা আপা কাজ করছে। 
সাকিবের বাবা-মা দু’জনই চাকরিজীবী। ব্যাংকার। সকাল একসঙ্গে অফিসে যান আবার একসঙ্গে ফেরেন। তাই রাত আর ছুটির দিন ছাড়া বাবা-মাকে খুব একটা কাছে পায় না সাকিব। ইশ্কুল থেকে ফিরে সাকিবের সারাদিন হয় একা একা, নয় তো মায়ের দূর সম্পর্কের আত্মীয় রীনার সঙ্গে কাটে।
চারটায় অফিস শেষ করে প্রতিদিন এরই মধ্যে তো আব্বু-আম্মু বাসায় ফেরে। কিন্তু আজ দেরি হচ্ছে কেন? কোনো সমস্যা হয়নি তো? নাকি দু’জনে একসঙ্গে কোথাও বেড়াতে গেছেন কিংবা শপিং করছেন? কিন্তু না, আমাকে ফেলে যাওয়ার তো কথা নয়। তবে হয়েছে টা কী? ভাবনাগুলো দশ-বছর-বয়সী সাকিবের মনে সোনালি ফড়িঙের মতো উড়াউড়ি করে। না, একা-একা বসে থাকতে আর ভাল লাগছে না। রীনা আপা কিচেনে ব্যস্ত। এই ফাঁকে নিঃশব্দে দরজা খুলে পাঁচতলার ছাদে চলে এল সে। ওদের বাসাটা দ্বিতীয় তলায়। উত্তরের জানালা দিয়ে খোলা মাঠ দেখা যায়। ওখানে ছোট ছেলে-মেয়েরা খেলা করে। মাঠটি সবুজ ঘাসে ভরা আর চারপাশে কিছু গাছপালাও চোখে পড়ে। সব মিলিয়ে ওটাকে কিছুটা গ্রামের মতো মনে হয়। সাকিব মাকে অনেক বলেছে ওই মাঠ থেকে একবার  ঘুরিয়ে আনতে। মা নেয়নি, রীনাও নেয় না।
আজ ছাদ থেকে মাঠটিকে স্পষ্ট দেখতে পেয়ে সাকিবের মনে আনন্দ আর ধরে না। কাপড় দিয়ে চোখ-বাঁধা একজন অন্যদের ছুঁয়ে দিতে চাইছে আর সবাই দূরে সরে যাচ্ছে। কেউ বা বল নিয়ে খেলছে, দৌড়াদৌড়ি করছে। আবোল-তাবোল কী যেন বলছে আর ইচ্ছে মতোন ঘুরছে। বাহ, ভারি মজার তো! দৃশ্যগুলো ভীষণ পছন্দ হল সাকিবের। এ রকম খেলা সে আগেও একবার দেখেছে ওর দাদুবাড়ি। গ্রামে এমনি আরো কত কিছু দেখা যায়। তাই গ্রাম খুব ভাল লাগে তার। কিন্তু মা বলে, গ্রাম নাকি একদম পচাঁ। গত ঈদেও গ্রামে গিয়েছিল সাকিব। কিন্তু ওর পরীক্ষা এবং মায়ের শরীর খারাপÑ এই অজুহাতে এবার শহরেই ঈদের ছুটি কাটিয়েছে তারা। হঠাৎ তার গ্রামে চলে যেতে ভীষণ ইচ্ছে হয়। আর ইচ্ছে করে বস্তির ওই ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে খেলতে। কিন্তু মায়ের চোখে পঁচা মাঠের ওই ছেলেদের সাথে কখনও কি সে মিশতে পারবে? ভাবতে ভাবতে অনেকক্ষণ গড়িয়ে গেছে। সুর্য্যিটাও হারিয়ে গেছে আকাশের কোলে। মাঠখানা ফাঁকা, খেলা শেষে সবাই ফিরে গেছে যে যার ঘরে। চার দিকে নেমে এসেছে অন্ধকার।
এদিকে বাসায় ফিরে সাকিবকে না-পেয়ে বাবা-মার সে কী খোঁজাখুজি! কোথায় গেল ছেলেটা? সামনের দরজাটা খোলা ছিল। কেউ ধরে নিয়ে গেল না তো তাকে। ওপর থেকে নিচ সব তলায় খোঁজা হয়ে গেছে। রীনা তিনবার ছাদ থেকে ঘুরে এসেছে। কিন্তু কাউকে দেখেনি। মা কাঁদছেন আর রীনাকে বকছেনÑ তুই আমার ছেলেকে না-দেখে কী করছিলি? পাশের বাসার সব আন্টিরা এসেছে সান্ত¡না দিতে। বাবাও ঘামছেন আর সবখানে ফোন করছেন। কিন্তু সাকিবের কোনো দেখা নেই। হঠাৎ সাকিবের হুঁশ হয়Ñ ছাদে তো বহুক্ষণ হয়ে গেছে। মা এসে ওকে খুঁজছে নিশ্চয়ই। উচ্চকণ্ঠে মা বলে ডেকে সে নিচে নেমে আসে। বাসায় ঢুকে শোরগোল শুনে কিছুটা বিস্মিত হয়। অনেকগুলো মানুষ অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। সে বুঝতে পারে না মামণি কাঁদছে কেন? অশ্রুভেজা চোখে মা একনাগাড়ে বলে বলে যায়Ñ বাবা তুই এলি? মাকে ফেলে এতক্ষণ কোথায় ছিলি? তোকে খুঁজতে খুঁজতে......। আচমকা এতসব প্রশ্ন শুনে চমকে গেলেও সাকিব কিছু বলে না।  সে দৌড়ে এসে চুপচাপ মায়ের বুকে মুখ লুকোয়। মায়ের অশ্রু ছাপিয়ে ওর চোখের কোণে ভেসে ওঠে খানিক আগের ভাবনাগুলো। সে জানে না, তার ইচ্ছের পাখিরা কখনও নীল ডানা মেলে উড়বে কি না!

শনিবার, ২১ জুলাই, ২০১২

সুরভি ছড়ানো হিমচাঁপা


গ্রীষ্মের কড়া রোদ্দুরে প্রকৃতির নিষ্প্রাণ রুক্ষতা ছাপিয়ে নির্মল হেসে ওঠে হিমচাঁপা। দুঃসহ উত্তাপে একটু 'হিম' যেমন পরম আশীর্বাদ রূপে প্রতিভাত, তেমনি হিমচাঁপার দর্শনও যে কারও মনে জাগিয়ে তোলে সি্নগ্ধ-শীতল অনুভূতি। কালচে সবুজ পাতার কোলে দৃষ্টিনন্দন সাদা ফুলের সৌন্দর্য মুগ্ধ হওয়ার মতো। ডুলিচাঁপা (Magnolia pterocarpa) আমাদের দেশের বুনো ম্যাগনোলিয়া আর হিমচাঁপা ভিনদেশি ম্যাগনোলিয়ার মধ্যে অন্যতম। কবিগুরু তাকে ডেকেছেন 'উদয়পদ্ম' নামে। ছয় থেকে বারোটি পাপড়িতে বিন্যস্ত বৃহৎ সাদা ফুলে কিছুটা লেবুর সুগন্ধি। ঘন সনি্নবেশিত পাপড়িতে হিমচাঁপার প্রথম প্রস্টম্ফুটন অপূর্ব, মনোরম। তাই এর আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে আপনার সতর্ক দৃষ্টি থাকতে হবে গাছের দিকে। সাতসকালে সদ্য ফোটা উদয়পদ্ম দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাপড়িগুলো ছড়িয়ে পড়ে এবং মলিন হয়ে যায়। হিমচাঁপা চিরসবুজ গাছ। বছরব্যাপী পাতা ঝরে ও নতুন পাতা গজায়। কালচে সবুজ পাতাগুলো বড়-লম্বাটে, বিন্যাসে একক ও আয়তাকার। শোভাবর্ধনকারী বৃক্ষ হিসেবে আমেরিকাসহ ইউরোপ-এশিয়ার নানা দেশে হিমচাঁপা
বেশ জনপ্রিয়। আমাদের উদ্যানেও এটি জায়গা করে নিয়েছে। ঢাকায় রমনা পার্ক, মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন, বলধা গার্ডেন, শিশু একাডেমীর বাগান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায় হিমচাঁপার দেখা মেলে।
এরা মূলত আমেরিকার ফ্লোরিডা ও টেক্সাসের প্রজাতি। আদি জন্মস্থানে গাছ বড় হলেও আমাদের দেশে ৬ থেকে ১০ মিটার উঁচু হয়। গাছের গড়ন হালকা ও কিছুটা লম্বাটে। বসন্তের শেষভাগে ছোট ডালের মাথায় কলি ধরতে শুরু করে। হিমচাঁপার ফল ডিম্বাকার। কিছুটা গোলাপি রঙের, ৮ থেকে ১০ সেমি লম্বা। ফল বীজে পরিপূর্ণ। বীজ পাখিদের প্রিয়, পাখি ও অন্যান্য প্রাণীর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বংশবৃদ্ধি সাধারণত কলম ও দাবা কলমের মাধ্যমে। লবণাক্ত মাটি, বায়ুপূর্ণ সমুদ্রতীরবর্তী এলাকাতেও এটি ভালো হয়। বৈজ্ঞানিক নাম ম্যাগনোলিয়া গ্রান্ডিফ্লোরা (Magnolia grandiflora) । নামের দ্বিতীয়াংশের উৎপত্তি লাতিন মৎধহফরং থেকে, যার অর্থ বড় আর ভষড়ৎধ মানে ফ্লাওয়ার বা ফুল। ফুলের আকারের জন্য এমন নাম হতে পারে। হিমচাঁপা গাছের কাঠ ভারী ও শক্ত। আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহারযোগ্য। আমেরিকার গৃহযুদ্ধকালে কনফেডারেট আর্মি হিমচাঁপাকে তাদের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে। 

মঙ্গলবার, ২৯ মে, ২০১২

বাহারি রঙের কাঠগোলাপ

গ্রীষ্ম কেবল কাঠফাটা রোদ্দুর, তপ্ত হাওয়া আর কালবোশেখীর প্রবল ঝড়ের মৌসুম নয়। বাহারি ফুলের সমারোহে গ্রীষ্ম ঋতু প্রকৃতির রাজ্যে যোগ করেছে ভিন্ন সুষমা। গুচ্ছ গুচ্ছ কাঠগোলাপের বর্ণালি শোভা অন্তত সেটাই মনে করিয়ে দেয়। পাতার ফাঁকে সাদা, লাল, গোলাপি আর হলুদাভ রঙের ছিটায় এটি আমাদের দৃষ্টি কাড়ে। রৌদ্রপ্রখর দিনে কাঠগোলাপের মিষ্টি সুবাস আর রঙিন পাপড়ি যেন সবার মধ্যে সুখের পরশ বুলিয়ে যায়। এর অনুপম সেীন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন:

ফুলগুলি যেন কথা
পাতাগুলি যেন চারিদিকে তার
পুঞ্জিত নীরবতা।

   
রঙের বৈচিত্রের মতো পরিচিতিতেও এটি বহুরূপী। কাঠগোলাপ ছাড়াও গুলাচ, কাঠচাঁপা, গোলকচাঁপা, গৌরচাঁপা, চালতাগোলাপ ইত্যাদি নামে একে ডাকা হয়। কাঠগোলাপের প্রজাতি বহু ও বিচিত্র। সুদূর গুয়াতেমালা, মেক্সিকো থেকে এসে এটি ছড়িয়ে পড়েছে আমাদের উদ্যানে। দেশের নানা প্রান্তেই এর দেখা মেলে। ঢাকায় সুপরিকল্পিত বীথি না থাকলেও বিভিন্ন জায়গায় চোখে পড়ে এর বর্ণিল প্রস্ফুটন। জাতীয় জাদুঘর, ব্রিটিশ কাউন্সিল, শিশু একাডেমির বাগান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কাঠগোলাপ গাছ দেখা যায়।
শীতে পাতাহীন বৃক্ষ যেন কোনো কুশলী শিল্পীর হাতে গড়া সুনিপুণ ভাস্কর্য। নিঃশব্দে দণ্ডায়মান কাঠগোলাপ-তরু নিঃসন্দেহে দৃষ্টিনন্দন। শীতের পর বসন্তেও পত্র এবং পুষ্পশূন্য কায়ায় এটি ঘুমিয়ে থাকে। চৈত্রের শেষভাগে শুরু হয় নতুন কুঁড়ির জাগরণ। ফুটতে শুরু করে একটি-দু’টি করে ফুল। দেখতে দেখতে ফুলে ফুলে ভরে ওঠে গোটা গাছ। আর ফুলের বাসর রাঙিয়ে হেসে ওঠে সৌম্য সবুজপাতা। ডালের মাথায় থোকা থোকা ফুল যেন মনোলোভা কোনো পুষ্পস্তবক। বিশেষ করে লাল-গোলাপি রঙের ফুলগুলো সবচেয়ে আকর্ষণীয় দেখায়। তরু তলে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত পথিক দৃষ্টি জুড়িয়ে নেয় একপলক। সঙ্গে মিষ্টি মধুর ঘ্রাণ উদাস-আকুল করে তোলে পথিকের মন। বাসি ফুলগুলো এক সময় ঝরে পড়ে। তখন গাছতলার ঝরা ফুলের সৌন্দর্যও উপভোগ করার মতো।
কাঠগোলাপ-তরু আকারে মাঝারি, উচ্চতা সাধারণত বারো থেকে ত্রিশ ফুট। নরম, ভঙ্গুর শাখা-প্রশাখা ছড়ানো-ছিটানো, দুধকষভরা। পাতা কিছুটা বড় ও লম্বা। পাঁচটি ছড়ানো পাপড়ির ফুলগুলো পাঁচ থেকে আট ইঞ্চি চওড়া। পাপড়ির কেন্দ্রে কিছুটা হলদে বা কমলা রঙের ছোঁয়া থাকে। ফুলের পাশাপাশি এর পাতার বিন্যাসের সৌন্দর্যও দৃষ্টি কাড়ে। কাঠগোলাপের বৈজ্ঞানিক নাম 
Plumeria spp. (প্রজাতি অনুসারে রুবরা, অ্যালবা, টিউবারকুলেটা ইত্যাদি নামে পরিচিত)। এ গাছের নানা অংশের ওষুধি ব্যবহার রয়েছে। নারকেল তেলের সঙ্গে এর কষ চর্মরোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এ ফুল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্রতার উৎস, পূজার উপকরণ। বৌদ্ধরা ভাবে এটি মৃত্যুহীন প্রাণের প্রতীক।   

ঘুম আসে না কাঁঠালচাঁপার গন্ধে

আম্মু বলেন পড়রে সোনা
আব্বু বলেন মন দে,
পাঠে আমার মন বসে না
কাঁঠালচাঁপার গন্ধে। (আল মাহমুদ)
শৈশবে মায়ের মুখে ছড়া শুনে কাঁঠালচাঁপা নামের সাথে প্রথম পরিচয়। ফুলের সঙ্গে পরিচয় আরো পরে। এই গ্রীষ্মে ঘন ঝোঁপে সবুজ পাতার ফাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলের বাগানে হঠাৎ দেখা পেলাম কাঁঠালচাঁপার। লতাময় ঝোঁপের আড়ালে সদ্য ফোটা কাঁঠালচাঁপার উচ্ছ্বাস সত্যিই নজরকাড়া। মিষ্টি হলুদ রঙের কাঁঠালচাঁপা আমাদের সবারই প্রিয় ফুল।
কাঁঠালচাঁপা গ্রীষ্মকালে ফুটতে শুরু করে। ফুল ফোটা অব্যাহত থাকে বর্ষাকাল পর্যন্ত। কাঁঠালচাঁপা গাছ দেখতে ঝোঁপ জাতীয়। শক্তলতার বিন্যাস এক সময় ঝোঁপে পরিণত হয়। গাঢ় সবুজ পাতা, পাতার বুনন অত্যন্ত নিবিড়। তাই ফুল ফোটার আগে পাতাময় কাঁঠালচাঁপার ঝাড়ের সৌন্দর্যও দেখার মতো। ফুলের রঙ প্রথমে হালকা সবুজ। প্রস্ফুটিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হলদে রঙ ধারণ করতে শুরু করে। পরিপূর্ণ ফুটন্ত ফুলের রঙ উজ্জ্বল হলুদ। ফুল পাতার ফাঁকে বোঁটায় ঝুলে থাকে। কাঁঠালচাঁপা গাছে পাতা এতটাই ঘন যে, ফুল সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না। যদিও গাঢ় সবুজের কোলে ছোট্ট ফুলের মিষ্টি হলুদ হাসি অপূর্ব, মনোমুগ্ধকর।
কাঁঠালচাঁপা বিখ্যাত এর সুগন্ধের জন্য। পরিপূর্ণ বিকশিত ফুলে ঠিক যেন পাকা কাঁঠালের মধুর ঘ্রাণ। গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে হাওয়ায় হাওয়ায়। এমন আকুল করা মিষ্টি ঘ্রাণে উদাস হয় হৃদয়-মন। ছয় পাপড়ির উচ্ছ্বলতা আর মনোলোভা ঘ্রাণের জন্য পুষ্পপ্রেমীদের কাছে তাই কাঁঠালচাঁপার বিপুল জনপ্রিয়তা। অনেক বাগানেই এ গাছের দেখা মেলে। ঢাকায় শাহবাগের কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি চত্বরে বেশ কয়েকটি কাঁঠালচাঁপার গাছ রয়েছে। ফুলের বোঁটা বাঁকা, আঁকশির মতো। ফল গোলাকার, ডালের মাথায় থোকায় থোকায় ঝুলে থাকে। বীজ ও কলমের মাধ্যমে কাঁঠালচাঁপার বংশবিস্তার। ইন্দো-মালয়ী প্রজাতির গাছ এটি।

শুক্রবার, ১৮ মে, ২০১২

কনকচাঁপার স্নিগ্ধ শোভা

য় ঋতুর বাংলাদেশে প্রতি বছর রূপের অপার ডালি নিয়ে আসে বসন্ত। আর যেসব ফুলের অমল শোভায় বসন্ত উদ্যান নির্মল হেসে ওঠে তার মধ্যে অন্যতম কনকচাঁপা। কনকচাঁপা (Ochna squarrosa) আমাদের কাছে নামে যতটা পরিচিত ততটাই অপরিচিত অবয়বে। কারণ ফুলটি বেশ দুর্লভ। ঢাকায় আছে হাতেগোনা কয়েকটি গাছ।
বলধা গার্ডেনের সিবিলি অংশে একটি কনকচাঁপার গাছ ছিল, এখন নেই। সেই গাছটির চারা এনে শিশু একাডেমীর বাগানে লাগিয়েছিলেন নিসর্গী বিপ্রদাশ বড়ূয়া। আবার শিশু একাডেমীর গাছটির একটি চারা নিজের ঘরে কয়েক বছর সযত্নে লালন করে রমনা পার্কে রোপণ করেছিলেন অধ্যাপক
দ্বিজেন শর্মা। সেই সূত্রে রমনা পার্কের গাছটি বলধা গার্ডেনের গাছটির নাতনি। দ্বিজেন শর্মার লেখা থেকেই জানা যায়_ 'আমার টবে তো ওর ঘরসংসার হবে না, ওকে যথাস্থানে পাঠানো আবশ্যক। ফোন করলাম রমনা পার্কের অফিসে। তারা ঠাঁই দিতে রাজি।...... সবাই মিলে সেরা জায়গাটিতেই আনুষ্ঠানিকভাবে চারাটি লাগানো হলো।'
কনকচাঁপা আমাদের অতি পুরনো ও প্রিয় ফুল। চমৎকার ও আকর্ষণীয় সৌন্দর্যে এটি নিসর্গের শোভা বৃদ্ধি করে। মূলত পাহাড়ি ফুল হলেও সমতলে দু'চারটি গাছ থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। শীতের রুক্ষতা অন্য সব গাছের মতো কনকচাঁপাকেও স্পর্শ করে। তখন গাছের সব পাতা ঝরে যায়। পাতাহীন ডালে কেবল শূন্যতার রোদন। বসন্তের শুরুতেই কনকচাঁপা যেন নতুনভাবে জেগে ওঠে। গাছের শাখা-প্রশাখা কচি তামাটে পাতায় ভরে ওঠে। গুচ্ছ গুচ্ছ কচি পাতা দখিনা বাতাসে দোল খায়। সেই সঙ্গে ফুটতে শুরু করে অসংখ্য ফুল। কুঁড়ির রহস্য ভেদ করে নতুন পাতার ফাঁকে ফাঁকে হেসে ওঠে উজ্জ্বল হলুদ রঙের ফুলগুলো। সারা গাছ ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। কনকচাঁপার পাপড়িগুলো তখন যেন সোনা রঙের দ্যুতি ছড়ায়। তার সঙ্গে মিষ্টি সৌরভ ভেসে বেড়ায় বসন্তের আলুথালু বাতাসে। মধুর লোভে ছুটে বেড়ায় মৌমাছি ভোমরার দল। কনকচাঁপার অপূর্ব রূপ আর সুবাসে মোহিত হয়ে কবিগুরুর মতো আমরাও গেয়ে উঠি_ কনকচাঁপার গন্ধ-ছোঁওয়া বনের অন্ধকারে.........।
থোকায় থোকায় অজস্র ফুল ফুটলেও খুব বেশি দিন থাকে না। বসন্তের সি্নগ্ধ সকালে কনকচাঁপার অপার সৌন্দর্য আমাদের মোহিত করে। বেলা একটু গড়ালেই রৌদ্রতাপে নেতিয়ে পড়ে ফুলগুলো। বিকেলে গাছতলায় বসে ঝরা ফুলের মেলা। কনকচাঁপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে রমনা পার্কে চলে আসুন। পাকের্র নার্সারির খুব কাছাকাছিই রয়েছে গাছটি। তা ছাড়া শিশু একাডেমী বাগানের গাছটিও খুব সহজেই নজর কাড়ে।
কনকচাঁপা মাঝারি ধরনের গাছ। আড়াই মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে। ডালপালা কিছুটা ছড়ানো। পাতা লম্ব-ডিম্বাকার, তরঙ্গায়িত। ফুল ৩ থেকে ৪ সেন্টিমিটার চওড়া, পাপড়ির সংখ্যা ১২। ফুল ঝরে গেলে লালচে গোলাকার ফল হয়। ফল একক বা গুচ্ছ হতে পারে, যা গাঢ় হলদে বৃত্তাংশ দ্বারা আবৃত। কাঠ শক্ত, লাল-বাদামি রঙের। কলম বা বীজ থেকে চারা করা যায়। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ কনকচাঁপার আদিনিবাস। কনকচাঁপার ওষুধি গুণও রয়েছে। এর শেকড় সর্প দংশনের প্রতিষেধক। হজমের সমস্যায় বাকল এবং ক্ষতের চিকিৎসায় পাতার প্রলেপ উপকারে আসে।

সোনালুর সোনালি আলো

গ্রীষ্মের খরতাপে প্রকৃতিতে প্রাণের সজীবতা নিয়ে যেসব ফুল ফোটে তার মধ্যে সোনালু বা সোনাইলের নাম উল্লেখযোগ্য। ঝাড়লণ্ঠনের মতো দীর্ঘ থোকায় হলুদ-সোনালি রঙের সোনালু ফুল চলতি পথে যে কারও নজর কাড়বেই। শীতকালে সোনালুর শাখা-প্রশাখায় সীমাহীন নিঃসঙ্গতা ভর করে। পুরো গাছে একটি পাতাও থাকে না। বসন্তেও অনেকটা নিষ্প্রাণ, নিস্তব্ধ। সোনালুর ঘুম ভাঙে বৈশাখের শুরুতে। তখন দীর্ঘ মঞ্জরির ফুলগুলো ফুটতে শুরু করে, তার সঙ্গে নতুন পাতার জাগরণ। দেখতে দেখতে ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় গাছ। পুষ্পিত সোনালু তখন যেন কাঁচা সোনা রঙে আবৃত। ডালপালা ভরে ওঠে কচি সবুজ পাতায়। সোনালুর প্রধান আকর্ষণ দীর্ঘ ঝুলন্ত পুষ্পমঞ্জরি। বৈশাখী হাওয়ার পরশে এর থোকাগুলো দুলতে থাকে, ঠিক যেন কানের দুলের মতো। আর হলুদ বরণ সৌন্দর্য মাতোয়ারা করে রাখে চারপাশ।
সোনালু গাছ আকারে ছোট। ডালপালা ছড়ানো-ছিটানো, নিবিড় নয়। গাঢ় সবুজ রঙের পাতাগুলো যৌগিক, মসৃণ ও ডিম্বাকৃতির। ফুল এক থেকে দেড় ইঞ্চি পর্যন্ত চওড়া, পাপড়ির
সংখ্যা পাঁচ। ফল গোল, লাঠির মতো লম্বা। এ কারণে সোনালু কোথাও কোথাও বানরলাঠি নামেও পরিচিত। বানরলাঠি ঘিরে লোকসমাজে নানা গল্প প্রচলিত। এ নিয়ে হৈচৈ আর দুরন্তপনায় মেতে ওঠে গ্রামের উদ্দাম কিশোরের দল। রূপ-প্রাচুর্যে অতুলনীয় সোনালু গ্রামবাংলায় স্বল্পসংখ্যায় চোখে পড়ে। ঢাকায় এ গাছের সংখ্যা খুব বেশি নয়। জানামতে, শেরেবাংলা নগরে জাতীয় সংসদ ভবনের মাঝখানের রাস্তায় যে একসারি গাছ দেখা যায় তা-ই ঢাকা শহরে সোনালুর সবচেয়ে বড় সমারোহ। এ ছাড়া রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, মিরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেন, ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন প্রাঙ্গণ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সোনালুর দেখা মেলে।
সোনালুর ফল, ফুল ও পাতা বানরের প্রিয় খাদ্য। এ গাছের কাঠ জ্বালানি ছাড়াও অন্যান্য কাজে লাগে। ফলের বিভিন্ন অংশ বাত, বমি ও রক্তস্রাব প্রতিরোধে উপকারী। বীজ সহজেই অঙ্কুরিত হয়, যদিও বৃদ্ধি মন্থর। সোনালুর আদিবাস পূর্ব এশিয়ায়। বৈজ্ঞানিক নাম ক্যাশিয়া ফিস্টুলা । ক্যাশিয়া গ্রিক নাম আর ফিস্টুলা অর্থ বাঁশি। ফলের আকৃতির জন্য এমন নামকরণ। সোনালুর ইংরেজি নাম গোল্ডেন শাওয়ার।

রবিবার, ২২ এপ্রিল, ২০১২

সমকালীন

১. আজকের পৃথিবীতে উদারতা মিছে
দয়া-মায়া যা-ই বলো অর্থের নিচে
মামা-চাচা যত আছে
নিজে খেয়ে নিজে বাঁচে
সাথে সাথে ধাবমান স্বার্থের পিছে।

২. মন্দ লোকে ছেয়ে গেছে সমাজ অলিগলি
নেই একতা ভাইয়ে ভাইয়েও কেবল দলাদলি
দুঃসময়ের এমন ক্ষণে
ইচ্ছে খুবই আমার মনে
মাতৃভূমির দুখ্ ঘোচাতে বারুদ হয়ে জ্বলি।

অনেক কাজ

বাঁচতে হলে করতে হবে
অনেক অনেক কাজ
কাজের কোনো নেই সীমা নেই
সকাল থেকে সাঁঝ।

ঠিক সময়ে কাজের জন্য
চেষ্টা যদি হয়
এই জীবনে উন্নতি লাভ
কঠিন কিছু নয়।

সময় এবং কাজের প্রতি
শ্রদ্ধা যাদের নেই
জীবন পথে পদে পদে
হারায় তারা খেই

কর্ম ছাড়া কষ্ট থেকে
মুক্তি অসম্ভব
ভাগ্যটাকে গড়ে নিতে
পরিশ্রমই সব।

আলসেমি খুব দ্রুত ছাড়ো
সৎ কাজে দাও মন
তবেই তুমি পেতে পারো
সফলতার ধন।

সোমবার, ১৯ মার্চ, ২০১২

গোলাপ নামের মেয়েকে....

যদিও আমি কাঁটা বেশি ভালবাসি
তবু ভুল করে গোলাপের কাছে
বারবার ছুটে আসি।

বুঝতে নেই তো বাকি
গোলাপের মায়া মরীচিকা শুধু
গোলাপ মানেই ফাঁকি।

গোলাপের প্রেমে আর জড়াব না
গোলাপ তোমাকে টাটা
আমি ভালবাসি কাঁটা।

রুমন নামের একটি মেয়ে

উনিশশত নব্বই সালের
সাতাশ ডিসেম্বরে
একটি মেয়ের হয় আগমন
বিশ্ব চরাচরে।


সময় পেরোয়, স্নেহের ছায়ায়
হয় সে বড় ধীরে
বাবা-মায়ের কত্ত আশা
মেয়েটিকে ঘিরে।


শান্ত-সুবোধ মিষ্টি মেয়ে
কথায় ভারি পাকা
দুই চোখে তার কৌতূহল আর

স্বপ্ন শত আকাঁ।

হাসিতে তার মুক্তো ঝরে
বাজে মোহন বাঁশি
মেধাবী সে, পরীক্ষাতে
একশ' তে পায় আঁশি।


পুষ্প আকাশ সাগর নদী
জোসনা রাতের আলো
রাতের পাখি নীল জোনাকি
তার লাগে বেশ ভালো।


সারা দিনের কাজের ফাঁকে
একটু অবসরে
রঙ-তুলিতে ছবি আঁকে
কিংবা সে গান করে।

রুমন নামের সেই মেয়েটি
আমার স্বজন ছিল
উতল হাওয়ার প্রবঞ্চনা
উড়িয়ে তাকে নিল।

মঙ্গলবার, ১৩ মার্চ, ২০১২

মন ছুঁতে চায়.......

মন ছুঁতে চায় চাঁদ-তারা-মেঘ
দূরের আকাশ নীল
মন হতে চায় প্রজাপতি

ধূসর ডানার চিল।

মন কেড়ে নেয় হাঁসের সাঁতার
শাপলা ফোটা ঝিল
মন ছুটে যায় পরির দেশে
নাটোর চলনবিল।

কর্ণফুলির ওই খেয়াঘাট
চাটগাঁ ডিসি হিল
মন খুঁজে পায় এক নদী সুখ
স্বপ্ন অনাবিল।

শামসুর রাহমানকে নিবেদিত

আজও আছে কবি তোমার
স্মৃতির শহর ঢাকা
আগের মতোই ব্যস্ত পথে
ঘোরে গাড়ির চাকা।

আজও দেখি আকাশ নীলে
আজব সুতোর ঘুড়ি
মেঘনা পারের শান্ত চরে
চিলের উড়াউড়ি।

তুমিই শুধু হারিয়ে গেছো
তেপান্তরের বনে
মহাকালের যাত্রী হয়ে
একাকী নির্জনে।


চশমা ঘড়ি কালি-কলম
চেয়ার লেখার খাতা
কাতর চোখে তাড়িয়ে বেড়ায়
তোমার স্মৃতিগাথা।

তোমার শোকে গাছের পাতা
শুকনো হলুদ বরণ
নেত্র কোণে অশ্রু নিয়ে 

করছি তোমায় স্মরণ।

জ্যামকাহিনী

ঢাকার পথে অসহ্য জ্যাম
বেশ পুরনো কথা
একটুখানি চলবে গাড়ি
থামবে যথাতথা।

অনন্যোপায় আমজনতার
নষ্ট সময়-টাকা
কষ্ট হলেও ঘেমে-নেয়ে
জ্যামেই বসে থাকা।

বেশ হতো কাজ জ্যাম কমানোর
একটা উপায় পেলে
ভাবছি শুধু কিন্তু কোনো
বুদ্ধি নাহি মেলে।

একটি নতুন  ভাবনা হঠাৎ
মাথার ভেতর খেলে
তাড়াবো জ্যাম আলাদিনের

যাদুর চেরাগ জ্বেলে।

এখন থেকে সব গাড়িতে
দাও লাগিয়ে পাখা
উড়বে গাড়ি শূন্যে তখন
রাস্তা হবে ফাঁকা।

রঙের সমুদ্দুর

বুনোলতার ঝোঁপের মত
সবুজ আমার দেশ
প্রজাপতির ডানায় ঢাকা
রোদেল পরিবেশ।

আমের ডালে পাতার ফাঁকে
কোকিল টিয়ে গায়
দখিন হাওয়া কাশের বনে
দোলা দিয়ে যায়।

বুকে জাগায় সুখের আবেশ
ভাটিয়ালির সুর
দূরের গাঁয়ের শর্ষে ক্ষেতও
রঙের সমুদ্দুর।

জোনাক-জ্বলা জোসনা রাতে
ঘরে থাকা দায়
চাঁদ-তারারা ডাকতে থাকে
আয়রে কাছে আয়।

সকাল-সাঁঝে হাওয়ায় ভাসে
কাঁঠালচাঁপার ঘ্রাণ
রূপ-অপরূপ দেশটা আমার
নেয় কেড়ে নেয় প্রাণ।

প্রবীণের সেবায় অবারিত দ্বার


তিনি চোখ বোলাচ্ছেন দৈনিক পত্রিকার পাতায়। গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়ছেন কাগজের ভেতর-বাহির। 'কেমন আছেন', প্রশ্ন করতেই হাসিমুখে বললেন, 'ভালো আছি'। আমজাদ হোসেন। বয়স সত্তরের কোঠায়। ১০ বছর ধরে আছেন প্রবীণ নিবাসে। 'এখানে কেন থাকেন'_এ জিজ্ঞাসার জবাবে জানালেন_'স্ত্রী বেঁচে নেই। একমাত্র সন্তান কানাডায় থাকে। সরকারি চাকরি করতাম। তাই অবসর নেওয়ার পর থেকে এখানেই আছি।'
কথা হলো আবু জাফর গিফারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক শিক্ষক রহিমা খাতুনের সঙ্গে। তিনি শোনালেন তাঁর জীবনের গল্প_একমাত্র ছেলে লন্ডনে পড়ালেখা করে আর মেয়ে স্বামীসহ কানাডায়। স্বামী মারা গেছেন আর হাতিরঝিল প্রকল্পের কারণে হারিয়েছেন নিজ বাড়ি। ক্ষতিপূরণ পাবেন বলে শুনেছেন। কিন্তু দৌড়াদৌড়ির ঝামেলায় আর পাওয়া হয়নি। তাই এটিই এখন তাঁর স্থায়ী নিবাস।
এমনই নানা কারণে যাঁদের স্বজনরা দেশে নেই, দেশে থাকলেও কাছে নেই কিংবা পাশে নেই, প্রৌঢ় বয়সে তাঁদের আশ্রয় হয়ে দাঁড়ায় ওল্ডহোম বা বৃদ্ধনিবাস। পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা বা নিঃসঙ্গতার কারণে বৃদ্ধনিবাসই হয় তাঁদের বাসস্থান। এমনই এক প্রতিষ্ঠান বাংলা প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান পরিচালিত প্রবীণ নিবাস ও হাসপাতাল। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধিত এ স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত। দেশের প্রাচীনতম ও বৃহৎ এ প্রবীণ কল্যাণ প্রতিষ্ঠান সব শ্রেণীর প্রবীণদের শারীরিক, মানসিক, আবাসিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পুনর্বাসনমূলক সেবাদানের পাশাপাশি বার্ধক্য বিষয়ে অবহিত, সংবেদনশীল ও তৎপর করতে কাজ করে। বার্ধক্য জীবনের একটি স্বাভাবিক পরিণতি। সমাজ ও সভ্যতা বিনির্মাণে প্রবীন জনগোষ্ঠীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। সুযোগ পেলে প্রবীণরাও অভিজ্ঞতার আলোকে দেশ ও সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই অধ্যক্ষ ডা. এ কে এম আবদুল ওয়াহেদ ১৯৬০ সালের ১০ এপ্রিল প্রতিষ্ঠা করেন এ প্রতিষ্ঠানটি। ইতিমধ্যে এর অগ্রযাত্রার ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে।

প্রবীণ নিবাস : প্রবীণদের বসবাসের জন্য এখানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে একটি ছয়তলা ভবন নির্মিত হয়েছে। এ নিবাসে বর্তমানে ২৮ জন প্রবীণ বাস করেন। তাঁদের আবাসনের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে এ প্রতিষ্ঠান। আছে প্রার্থনা কক্ষ, গ্রন্থাগার, টেলিভিশন ও ইনডোর গেইমসের সুবিধা। গ্রন্থাগারে আছে সাহিত্য, ইতিহাস, অর্থনীতি ও দর্শনবিষয়ক প্রচুর বই, ম্যাগাজিন ও সাময়িকী পড়ার সুবিধা। প্রতিবছর প্রকাশিত হয় প্রবীণ হিতৈষী সংঘের জার্নাল 'প্রবীণ হিতৈষী পত্রিকা'। প্রবীণদের সেবা প্রদানে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে দুজনকে দেওয়া হয় মমতাময় ও মমতাময়ী প্রবীণ সেবা পুরস্কার।
প্রবীণ হাসপাতাল : এ হাসপাতালে জরুরি বিভাগসহ ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসসেবা চালু আছে। কম খরচে প্রবীণ ও কম বয়সীদেরও চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে প্রবীণদের পাঁচ টাকা এবং অন্যদের ৩০ টাকায় দেওয়া হয় প্রেসক্রিপশন। বর্তমানে হাসপাতালে ১৫ জন ডাক্তার কর্মরত আছেন। এখানে ৩০ শতাংশ দরিদ্র প্রবীণকে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
'বার্ধক্যে ব্যক্তি যেমন মানসিকভাবে নিঃসঙ্গ বোধ করেন, তেমনি তখন চিকিৎসাসেবাও তাঁর জন্য অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়। তাই বয়স্কদের সামাজিক আশ্রয়ের পাশাপাশি স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিও এ প্রতিষ্ঠানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।' বললেন হাসপাতাল পরিচালক ডা. শেখ লুৎফর রহমান। ৩৫ বছর ধরে এখানে দায়িত্বরত এ প্রবীণ চিকিৎসক আরো বলেন, 'বয়স্কদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কাজটি আমি বেশ আনন্দের সঙ্গে করছি।'
প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আশরাফুল আলম মাসুম জানান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে তাঁরা বার্ষিক বরাদ্দ পান ৫৫ লাখ টাকা। জেরিয়াট্রিক ইনস্টিটিউট স্থাপন, উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণ, প্রবীণ ক্লাব ও ডে-কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠাসহ আরো নানা পরিকল্পনার কথা জানালেন সংঘের মহাসচিব ক্যাপ্টেন (অব.) এ কে এম শামসুল হক।

একটু বাড়াও...

গ্রাম-শহরে অনেক শিশুই
চোখে পড়ে নিত্য
দুই ঠোঁটে নেই হাসির ঝিলিক
বিষাদ-ভরা চিত্ত।

চুলগুলো সব এলোমেলো
দেহখানি শীর্ণ
পরনে যা তা- ছেঁড়া
ময়লা-লাগা জীর্ণ।

ড্রেনে-খাদে হাতড়ে বেড়ায়
পায় না খেতে খাদ্য
নেই তো মোটে মানুষ হয়ে
বেঁচে থাকার সাধ্য।

তোমরা যারা বিত্তশালী
সুখে আছ মস্ত
ওদের দিকে একটু বাড়াও
ভালোবাসার হস্ত।

রবিবার, ১১ মার্চ, ২০১২

সংগ্রহ সাড়ে ৫ লাখ, পাঠক নেই!


সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর পরিচালিত বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার শেরে বাংলানগরে অবস্থিত
বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার

মানবসভ্যতার অগ্রযাত্রায় গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। গ্রন্থাগারই একটি জাতির ইতিহাসের ভিত্তি নির্মাণ করে। মানুষকে ঋদ্ধ করার প্রত্যয়ে কাল থেকে কালান্তরে গ্রন্থাগারই জ্বেলে দেয় অফুরান জ্ঞানের দীপশিখা। আর সমগ্র জাতির শিক্ষা, গবেষণা, জ্ঞানচর্চাসহ সৃজনশীল ও বুদ্ধিবৃত্তিক অর্জনের কেন্দ্রস্থল হলো সে দেশের জাতীয় গ্রন্থাগার। জাতীয় গ্রন্থাগারই একটি দেশের সব মুদ্রিত সৃষ্টিকর্মের কেন্দ্রীয় সংগ্রহশালা, কৃষ্টি ও সভ্যতার দর্পণ। আমাদের জাতীয় ইতিহাস-ঐতিহ্য, ভাষা-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতির যাবতীয় প্রকাশনা সংরক্ষণে নিবেদিত বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার। এ গ্রন্থাগার বর্তমান পাঠকদের যেমন সেবা দিচ্ছে, তেমনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও একটি নির্ভরযোগ্য তথ্যভাণ্ডার প্রস্তুত করছে। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর পরিচালিত বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার রাজধানীর শেরে বাংলানগরে অবস্থিত।
ষাটের দশকের প্রথম ভাগে পাকিস্তান জাতীয় গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হলে ১৯৬৭ সালে ঢাকায় এর প্রাদেশিক পুস্তক সংগ্রহ শাখা খোলা হয়। স্বাধীনতা লাভের পর এটিই বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার হিসেবে যাত্রা শুরু করে।
পাঠকদের সেবা দেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগারের কর্মপরিধি ব্যাপক বিস্তৃত। কপিরাইট আইন অনুযায়ী এটি বাংলাদেশে প্রকাশিত সব সৃজনশীল নতুন বই সংগ্রহ করে। সংগৃহীত বই ও সাময়িকীর স্থায়ী সুরক্ষা ও নতুন প্রকাশনার পরিচিতিমূলক নিয়মিত গ্রন্থপঞ্জি প্রণয়ন করে। মাইক্রোফিল্ম, লেমিনেশন ইত্যাদির মাধ্যমে দুষ্প্রাপ্য-ক্ষয়িষ্ণু বই ও প্রকাশনা সংরক্ষণ করে। জাতীয় পর্যায়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড উপলক্ষে বই প্রদর্শনী, বইমেলা, সেমিনার, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করে। গ্রন্থাগার বিষয়ে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ রক্ষা এবং গ্রন্থাগার সম্পর্কে পরিকল্পনা গ্রহণ ও নীতিনির্ধারণে পরামর্শ দেয়। এ ছাড়া লেখক-প্রকাশকদের আইএসবিএন (ISBN) প্রদান করা এর অন্যতম দায়িত্ব।
জাতীয় গ্রন্থাগারের সংগ্রহ
বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগারে রয়েছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের যাবতীয় বিষয়ে সমৃদ্ধ সংগ্রহ। ভাষা, ধর্ম, দর্শন, শিল্পকলা, রাজনীতি, অর্থনীতি, পরিবেশ, কৃষি, চিকিৎসা, প্রকৌশল, মানব উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইত্যাদি নিয়ে এখানে আছে বিপুল প্রকাশনা। সমসাময়িক বিষয় ছাড়াও এখানে পাওয়া যায় পুরনো ও দুর্লভ অনেক কিছু। প্রতিষ্ঠানের প্রোগ্রামিং অফিসার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার জানান, 'সংবাদপত্র, দেশি-বিদেশি বই, জার্নাল, ম্যাগাজিন, মাইক্রোফিল্ম, মাইক্রোফিসসহ বর্তমানে সংগ্রহ প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ।' এখানে ১৯৬১ থেকে বর্তমান পর্যন্ত প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য সব বাংলা ও ইংরেজি দৈনিক, সাপ্তাহিক, আঞ্চলিক পত্রিকা সংরক্ষিত আছে। বাংলা ও ইংরেজি ছাড়া এখানে হিন্দি, উর্দু, আরবি, ফার্সি, জাপানি, চীনা ও কোরিয়ান ভাষার বই, জার্নাল ও সাময়িকী রয়েছে। ১৮৯২ থেকে বর্তমান পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার কপি মানচিত্র সংগৃহীত আছে। পুরনো সামগ্রীর মধ্যে সংগৃহীত আছে মনসামঙ্গল কাব্যের পাণ্ডুলিপি, আলালের ঘরের দুলাল, বাঙ্গালার ইতিহাস, নবচরিত, ময়মনসিংহের বিবরণ, সাহিত্য সন্দর্ভ ইত্যাদি গ্রন্থের দুর্লভ সংস্করণ। এ ছাড়া ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর নবাব, ড. ফজলুল হাসান ইউসুফ, গাজীপুরের ভাওয়াল রাজার দুষ্প্রাপ্য নিদর্শন বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগারের সংগ্রহকে সমৃদ্ধ করেছে।
পাঠকসেবা
বাংলা ও ইংরেজি সংগ্রহের জন্য পৃথক দুটি এবং সংবাদপত্রের জন্য একটি_এই তিনটি পাঠকক্ষের মাধ্যমে পাঠকসেবা দেওয়া হয়। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শুক্র ও শনিবার এবং অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন বন্ধ। ১৫ টাকা সদস্য ফি জমা দিয়ে আবেদন করে যে কেউ এক বছরের জন্য গ্রন্থাগারের সদস্য হতে পারেন। সদস্যদের জন্য রেফারেন্স, ফটোকপিসেবা এবং স্বল্প পরিসরে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা আছে। এ ছাড়া গ্রন্থাগারে রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মিলনায়তন এবং প্রদর্শনী গ্যালারি। জাতীয় গ্রন্থাগারের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও আদর্শের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ যেকোনো প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত ফির বিনিময়ে মিলনায়তন ও গ্যালারি ব্যবহার করতে পারে।

সুবিধা অনেক, পাঠক নেই
গ্রন্থাগারে বিপুল সংগ্রহ সত্ত্বেও যাদের জন্য এ আয়োজন, সে পাঠক এখানে নেই। গ্রন্থাগারের কর্মকাণ্ডে ও সুযোগ-সুবিধার বিশালত্বের তুলনায় এখানে পাঠকের সংখ্যা একেবারে নগণ্য। ঢাকার অনেক মানুষই এ গ্রন্থাগার সম্পর্কে জানে না। অবস্থানগতভাবে ঢাকার মূল কেন্দ্র থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় এবং এর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অজ্ঞতাই এর মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এখানে পড়তে আসা আলমগীর হোসেন বলেন, 'আশপাশে বৃহৎ কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় এবং প্রচার-প্রচারণার অভাবে এখানে পাঠক কম।'
আরকাইভস ও গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. তাইবুল হাসান খান বলেন, 'পাঠক ও দর্শনার্থীর সংখ্যা সময়ের সঙ্গে বাড়ছে এবং গ্রন্থাগারের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে।' গ্রন্থজগতে জাতিকে আলোকিত করার মতো এ প্রতিষ্ঠানের আরো ব্যাপক প্রচার-পরিচিতির প্রয়োজন আছে। তিনি আরো বলেন, 'জাতীয় গ্রন্থাগারের মতো বড় মাপের প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় বর্তমান লোকবল যথেষ্ট নয়। সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে কার্যক্রম চালাতে জনবল বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।'

গ্রীষ্ম-স্মৃতি

গ্রীষ্ম এলে মনের ভেতর ভাবনা শত জাগে
মুক্ত স্বাধীন আহা কতই সুখী ছিলাম আগে।
কাটিয়ে দিতাম সারাটা দিন পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে
গাঁ'কে ছেড়ে মা'কে ছেড়ে এখন দূরে।

গাঁয়ের কথা স্মরণ হলে মন যে কেমন করে
এক নিমেশেই দু'চোখ আমার অশ্রুতে যায় ভরে।
জীবন নিয়ে ব্যস্ত ভীষণ পাই না খানিক ছুটি
তবুও বুনি গাঁয়ে ফেরার স্বপ্ন মুঠি মুঠি।

আম-কাঁঠালের ছায়ায় ঘেরা মামার বাড়ির ছবি
সেই না নদী বিল খেয়াঘাট চোখে ভাসে সবি।
মামার বাড়ির প্রতি আমার আজও অশেষ প্রীতি
গ্রীষ্ম এলে মনে পড়ে ছেলেবেলার স্মৃতি।

ইচ্ছেপরি বাজায় বাঁশি


(আদুরে বন্ধু আরিবার জন্য)


মিষ্টি হাসির রোল ছড়ানো
তিন বছরের ছোট্ট খুকি
চাঁদের মতো মুখখানা তার
তাই বুঝি নাম চন্দ্রমুখী।

চঞ্চু দুটো শিশির মোড়া
নয়ন-জোড়া কাজল কালো
শান্ত স্বরের দুষ্টুমিতে
সারা ঘরে ছড়ায় আলো।

রঙের কণা উছলে পড়ে
রোজ অপলক দৃষ্টি জুড়ে
পরশ পেলে খেলার ছলে
মায়ায় বাঁধে মোহন সুরে।

কোমল ভাষায় চপল আশায়
ইচ্ছেপরি বাজায় বাঁশি
জোসনালোকে মায়ের চোখে
উথলে ওঠে স্বপ্নরাশি।

কচি প্রাণের কলকাকলি
আজকে সবার মন জুড়ালো
রইল আশিস স্নেহ অপার
ছোট্ট মণি থেকো ভালো।

অর্কিড কাঞ্চনে মুগ্ধতা

পৌষের এক কুয়াশামোড়ানো সকালে প্রকৃতির একটু সবুজ ছোঁয়া পেতে গিয়েছিলাম রাজধানীর রমনা পার্কে। শীতের চাদর ফুঁড়ে এক চিলতে রোদের ঝিলিক ভারী মিষ্টি ...