শনিবার, ২১ জুলাই, ২০১২

সুরভি ছড়ানো হিমচাঁপা


গ্রীষ্মের কড়া রোদ্দুরে প্রকৃতির নিষ্প্রাণ রুক্ষতা ছাপিয়ে নির্মল হেসে ওঠে হিমচাঁপা। দুঃসহ উত্তাপে একটু 'হিম' যেমন পরম আশীর্বাদ রূপে প্রতিভাত, তেমনি হিমচাঁপার দর্শনও যে কারও মনে জাগিয়ে তোলে সি্নগ্ধ-শীতল অনুভূতি। কালচে সবুজ পাতার কোলে দৃষ্টিনন্দন সাদা ফুলের সৌন্দর্য মুগ্ধ হওয়ার মতো। ডুলিচাঁপা (Magnolia pterocarpa) আমাদের দেশের বুনো ম্যাগনোলিয়া আর হিমচাঁপা ভিনদেশি ম্যাগনোলিয়ার মধ্যে অন্যতম। কবিগুরু তাকে ডেকেছেন 'উদয়পদ্ম' নামে। ছয় থেকে বারোটি পাপড়িতে বিন্যস্ত বৃহৎ সাদা ফুলে কিছুটা লেবুর সুগন্ধি। ঘন সনি্নবেশিত পাপড়িতে হিমচাঁপার প্রথম প্রস্টম্ফুটন অপূর্ব, মনোরম। তাই এর আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে আপনার সতর্ক দৃষ্টি থাকতে হবে গাছের দিকে। সাতসকালে সদ্য ফোটা উদয়পদ্ম দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাপড়িগুলো ছড়িয়ে পড়ে এবং মলিন হয়ে যায়। হিমচাঁপা চিরসবুজ গাছ। বছরব্যাপী পাতা ঝরে ও নতুন পাতা গজায়। কালচে সবুজ পাতাগুলো বড়-লম্বাটে, বিন্যাসে একক ও আয়তাকার। শোভাবর্ধনকারী বৃক্ষ হিসেবে আমেরিকাসহ ইউরোপ-এশিয়ার নানা দেশে হিমচাঁপা
বেশ জনপ্রিয়। আমাদের উদ্যানেও এটি জায়গা করে নিয়েছে। ঢাকায় রমনা পার্ক, মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন, বলধা গার্ডেন, শিশু একাডেমীর বাগান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায় হিমচাঁপার দেখা মেলে।
এরা মূলত আমেরিকার ফ্লোরিডা ও টেক্সাসের প্রজাতি। আদি জন্মস্থানে গাছ বড় হলেও আমাদের দেশে ৬ থেকে ১০ মিটার উঁচু হয়। গাছের গড়ন হালকা ও কিছুটা লম্বাটে। বসন্তের শেষভাগে ছোট ডালের মাথায় কলি ধরতে শুরু করে। হিমচাঁপার ফল ডিম্বাকার। কিছুটা গোলাপি রঙের, ৮ থেকে ১০ সেমি লম্বা। ফল বীজে পরিপূর্ণ। বীজ পাখিদের প্রিয়, পাখি ও অন্যান্য প্রাণীর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বংশবৃদ্ধি সাধারণত কলম ও দাবা কলমের মাধ্যমে। লবণাক্ত মাটি, বায়ুপূর্ণ সমুদ্রতীরবর্তী এলাকাতেও এটি ভালো হয়। বৈজ্ঞানিক নাম ম্যাগনোলিয়া গ্রান্ডিফ্লোরা (Magnolia grandiflora) । নামের দ্বিতীয়াংশের উৎপত্তি লাতিন মৎধহফরং থেকে, যার অর্থ বড় আর ভষড়ৎধ মানে ফ্লাওয়ার বা ফুল। ফুলের আকারের জন্য এমন নাম হতে পারে। হিমচাঁপা গাছের কাঠ ভারী ও শক্ত। আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহারযোগ্য। আমেরিকার গৃহযুদ্ধকালে কনফেডারেট আর্মি হিমচাঁপাকে তাদের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

অর্কিড কাঞ্চনে মুগ্ধতা

পৌষের এক কুয়াশামোড়ানো সকালে প্রকৃতির একটু সবুজ ছোঁয়া পেতে গিয়েছিলাম রাজধানীর রমনা পার্কে। শীতের চাদর ফুঁড়ে এক চিলতে রোদের ঝিলিক ভারী মিষ্টি ...