বৃহস্পতিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১২

রূপসী নীল অপরাজিতা

লাল, সাদা, বেগুনি, নীল, গোলাপি এমনি আরো কত রঙে রঙিন আমাদের পুষ্প-নিসর্গ! এর মধ্যে নীল ফুলের কথা যদি বলি- প্রথমেই আসে রূপসী অপরাজিতার নাম। লতানো গাছে সবুজপাতার কোলে এক টুকরো প্রগাঢ় নীলের সম্ভাষণ আপনার ভাললাগার অনুভূতিকে নিমেষে ছুঁয়ে যাবে। ফুলে কোনো গন্ধ নেই, তবু রঙের বাহার আর মিষ্টি শোভায় অনন্য সে অপরাজিতা।
একটু খেয়াল করলে দেখবেন, অপরাজিতা গুচ্ছে ফোটে না। পাতাভর্তি লতার ফাঁকে ফাঁকে এক একটি ফুল ফোটে, যেন এরা একা থাকতে ভালবাসে। আর তাতে আপনার ভাবুক মন আনমনে গেয়ে উঠতে পারে নজরুলের গান:

আমি বিজন বনের অপরাজিতা
আমার কথা কহি গানে......। 
গাঢ় নীল ফুলটিকে ডাকা হয় নীলকণ্ঠ নামেও। নীল ছাড়াও চোখে পড়ে সাদা এবং হালকা বেগুনি রঙের ফুল। ফুলের ভেতরের দিকটা সাদা বা ঈষৎ হলুদ রঙের হয়ে থাকে। বাড়ির আঙিনায়, টবে বা বাগানে সাধারণত এ গাছ লাগানো হয়। দেখা যায় বুনো অপরাজিতাও। আশেপাশের উঁচু গাছ বেয়ে এটি তরতর করে বেড়ে ওঠে, ফুলে-পাতায় বিকশিত হয়। হালকা সবুজ রঙের পাতার গড়ন উপবৃত্তাকার। ঝোপজাতীয় গাছে প্রায় সারা বছর ফুল ফোটে। বহুবর্ষজীবী এ লতা ২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়।
অপরাজিতার বৈজ্ঞানিক নাম ক্লাইটোরিয়া টের্নাটেয়া (Clitoria ternatea). ক্লাইটোরিয়া শব্দটি এসেছে গ্রিক ক্লেটোরিস থেকে, ফুলের আকার বোঝানোর জন্য। আর টের্নাটেয়া এসেছে ইন্দোনেশিয়ার মালাক্কা উপসাগরের টের্নাট দ্বীপের নামানুসারে, যেখান থেকে এই ফুলটি সংগ্রহ ও নামকরণ করা হয়। ইংরেজি নাম বাটারফ্লাই পি বা ব্লু পি।
কেবল সৌন্দর্যে নয়, ওষুধি গুণেও অতুলনীয় অপরাজিতা। এর ফুল, পাপড়ি, মূল ও গাছের লতা নানা ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহার্য। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে অপরাজিতা পবিত্র উদ্ভিদ। শারদীয় দুর্গোৎসবে ষষ্ঠীতে এবং বিজয়া দশমীর পুজোয় এ ফুল ব্যবহারের প্রচলন আছে। রূপকথার গল্পেও আছে অপরাজিতার নাম, পরিদের কাছে আংটি হিসেবে ছিল ফুলটির ব্যবহার। 
ঢাকায় রমনা পার্ক, শিশু একাডেমীর বাগান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকাসহ বিভিন্ন বাগানে অপরাজিতা ফুলের দেখা মেলে। ঢাকার যাপিত জীবনে সবুজের দীনতা এবং জায়গার স্বল্পতায় ছাদবাগানে এবং টবে অপরাজিতা গাছ লাগানো যেতে পারে।

ছবির ক্যাপশন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদ্দীন হলের বাগানে অপরাজিতা ফুল  >> লেখক

1 টি মন্তব্য:

অর্কিড কাঞ্চনে মুগ্ধতা

পৌষের এক কুয়াশামোড়ানো সকালে প্রকৃতির একটু সবুজ ছোঁয়া পেতে গিয়েছিলাম রাজধানীর রমনা পার্কে। শীতের চাদর ফুঁড়ে এক চিলতে রোদের ঝিলিক ভারী মিষ্টি ...