রবিবার, ১১ মার্চ, ২০১২

সংগ্রহ সাড়ে ৫ লাখ, পাঠক নেই!


সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর পরিচালিত বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার শেরে বাংলানগরে অবস্থিত
বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার

মানবসভ্যতার অগ্রযাত্রায় গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। গ্রন্থাগারই একটি জাতির ইতিহাসের ভিত্তি নির্মাণ করে। মানুষকে ঋদ্ধ করার প্রত্যয়ে কাল থেকে কালান্তরে গ্রন্থাগারই জ্বেলে দেয় অফুরান জ্ঞানের দীপশিখা। আর সমগ্র জাতির শিক্ষা, গবেষণা, জ্ঞানচর্চাসহ সৃজনশীল ও বুদ্ধিবৃত্তিক অর্জনের কেন্দ্রস্থল হলো সে দেশের জাতীয় গ্রন্থাগার। জাতীয় গ্রন্থাগারই একটি দেশের সব মুদ্রিত সৃষ্টিকর্মের কেন্দ্রীয় সংগ্রহশালা, কৃষ্টি ও সভ্যতার দর্পণ। আমাদের জাতীয় ইতিহাস-ঐতিহ্য, ভাষা-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতির যাবতীয় প্রকাশনা সংরক্ষণে নিবেদিত বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার। এ গ্রন্থাগার বর্তমান পাঠকদের যেমন সেবা দিচ্ছে, তেমনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও একটি নির্ভরযোগ্য তথ্যভাণ্ডার প্রস্তুত করছে। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর পরিচালিত বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার রাজধানীর শেরে বাংলানগরে অবস্থিত।
ষাটের দশকের প্রথম ভাগে পাকিস্তান জাতীয় গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হলে ১৯৬৭ সালে ঢাকায় এর প্রাদেশিক পুস্তক সংগ্রহ শাখা খোলা হয়। স্বাধীনতা লাভের পর এটিই বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার হিসেবে যাত্রা শুরু করে।
পাঠকদের সেবা দেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগারের কর্মপরিধি ব্যাপক বিস্তৃত। কপিরাইট আইন অনুযায়ী এটি বাংলাদেশে প্রকাশিত সব সৃজনশীল নতুন বই সংগ্রহ করে। সংগৃহীত বই ও সাময়িকীর স্থায়ী সুরক্ষা ও নতুন প্রকাশনার পরিচিতিমূলক নিয়মিত গ্রন্থপঞ্জি প্রণয়ন করে। মাইক্রোফিল্ম, লেমিনেশন ইত্যাদির মাধ্যমে দুষ্প্রাপ্য-ক্ষয়িষ্ণু বই ও প্রকাশনা সংরক্ষণ করে। জাতীয় পর্যায়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড উপলক্ষে বই প্রদর্শনী, বইমেলা, সেমিনার, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করে। গ্রন্থাগার বিষয়ে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ রক্ষা এবং গ্রন্থাগার সম্পর্কে পরিকল্পনা গ্রহণ ও নীতিনির্ধারণে পরামর্শ দেয়। এ ছাড়া লেখক-প্রকাশকদের আইএসবিএন (ISBN) প্রদান করা এর অন্যতম দায়িত্ব।
জাতীয় গ্রন্থাগারের সংগ্রহ
বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগারে রয়েছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের যাবতীয় বিষয়ে সমৃদ্ধ সংগ্রহ। ভাষা, ধর্ম, দর্শন, শিল্পকলা, রাজনীতি, অর্থনীতি, পরিবেশ, কৃষি, চিকিৎসা, প্রকৌশল, মানব উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইত্যাদি নিয়ে এখানে আছে বিপুল প্রকাশনা। সমসাময়িক বিষয় ছাড়াও এখানে পাওয়া যায় পুরনো ও দুর্লভ অনেক কিছু। প্রতিষ্ঠানের প্রোগ্রামিং অফিসার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার জানান, 'সংবাদপত্র, দেশি-বিদেশি বই, জার্নাল, ম্যাগাজিন, মাইক্রোফিল্ম, মাইক্রোফিসসহ বর্তমানে সংগ্রহ প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ।' এখানে ১৯৬১ থেকে বর্তমান পর্যন্ত প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য সব বাংলা ও ইংরেজি দৈনিক, সাপ্তাহিক, আঞ্চলিক পত্রিকা সংরক্ষিত আছে। বাংলা ও ইংরেজি ছাড়া এখানে হিন্দি, উর্দু, আরবি, ফার্সি, জাপানি, চীনা ও কোরিয়ান ভাষার বই, জার্নাল ও সাময়িকী রয়েছে। ১৮৯২ থেকে বর্তমান পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার কপি মানচিত্র সংগৃহীত আছে। পুরনো সামগ্রীর মধ্যে সংগৃহীত আছে মনসামঙ্গল কাব্যের পাণ্ডুলিপি, আলালের ঘরের দুলাল, বাঙ্গালার ইতিহাস, নবচরিত, ময়মনসিংহের বিবরণ, সাহিত্য সন্দর্ভ ইত্যাদি গ্রন্থের দুর্লভ সংস্করণ। এ ছাড়া ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর নবাব, ড. ফজলুল হাসান ইউসুফ, গাজীপুরের ভাওয়াল রাজার দুষ্প্রাপ্য নিদর্শন বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগারের সংগ্রহকে সমৃদ্ধ করেছে।
পাঠকসেবা
বাংলা ও ইংরেজি সংগ্রহের জন্য পৃথক দুটি এবং সংবাদপত্রের জন্য একটি_এই তিনটি পাঠকক্ষের মাধ্যমে পাঠকসেবা দেওয়া হয়। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শুক্র ও শনিবার এবং অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন বন্ধ। ১৫ টাকা সদস্য ফি জমা দিয়ে আবেদন করে যে কেউ এক বছরের জন্য গ্রন্থাগারের সদস্য হতে পারেন। সদস্যদের জন্য রেফারেন্স, ফটোকপিসেবা এবং স্বল্প পরিসরে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা আছে। এ ছাড়া গ্রন্থাগারে রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মিলনায়তন এবং প্রদর্শনী গ্যালারি। জাতীয় গ্রন্থাগারের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও আদর্শের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ যেকোনো প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত ফির বিনিময়ে মিলনায়তন ও গ্যালারি ব্যবহার করতে পারে।

সুবিধা অনেক, পাঠক নেই
গ্রন্থাগারে বিপুল সংগ্রহ সত্ত্বেও যাদের জন্য এ আয়োজন, সে পাঠক এখানে নেই। গ্রন্থাগারের কর্মকাণ্ডে ও সুযোগ-সুবিধার বিশালত্বের তুলনায় এখানে পাঠকের সংখ্যা একেবারে নগণ্য। ঢাকার অনেক মানুষই এ গ্রন্থাগার সম্পর্কে জানে না। অবস্থানগতভাবে ঢাকার মূল কেন্দ্র থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় এবং এর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অজ্ঞতাই এর মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এখানে পড়তে আসা আলমগীর হোসেন বলেন, 'আশপাশে বৃহৎ কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় এবং প্রচার-প্রচারণার অভাবে এখানে পাঠক কম।'
আরকাইভস ও গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. তাইবুল হাসান খান বলেন, 'পাঠক ও দর্শনার্থীর সংখ্যা সময়ের সঙ্গে বাড়ছে এবং গ্রন্থাগারের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে।' গ্রন্থজগতে জাতিকে আলোকিত করার মতো এ প্রতিষ্ঠানের আরো ব্যাপক প্রচার-পরিচিতির প্রয়োজন আছে। তিনি আরো বলেন, 'জাতীয় গ্রন্থাগারের মতো বড় মাপের প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় বর্তমান লোকবল যথেষ্ট নয়। সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে কার্যক্রম চালাতে জনবল বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।'

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

অর্কিড কাঞ্চনে মুগ্ধতা

পৌষের এক কুয়াশামোড়ানো সকালে প্রকৃতির একটু সবুজ ছোঁয়া পেতে গিয়েছিলাম রাজধানীর রমনা পার্কে। শীতের চাদর ফুঁড়ে এক চিলতে রোদের ঝিলিক ভারী মিষ্টি ...