তিনি চোখ বোলাচ্ছেন দৈনিক পত্রিকার পাতায়। গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়ছেন কাগজের
ভেতর-বাহির। 'কেমন আছেন', প্রশ্ন করতেই হাসিমুখে বললেন, 'ভালো আছি'। আমজাদ
হোসেন। বয়স সত্তরের কোঠায়। ১০ বছর ধরে আছেন প্রবীণ নিবাসে। 'এখানে কেন
থাকেন'_এ জিজ্ঞাসার জবাবে জানালেন_'স্ত্রী বেঁচে নেই। একমাত্র সন্তান
কানাডায় থাকে। সরকারি চাকরি করতাম। তাই অবসর নেওয়ার পর থেকে এখানেই আছি।'
কথা হলো আবু জাফর গিফারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক শিক্ষক রহিমা খাতুনের সঙ্গে। তিনি শোনালেন তাঁর জীবনের গল্প_একমাত্র ছেলে লন্ডনে পড়ালেখা করে আর মেয়ে স্বামীসহ কানাডায়। স্বামী মারা গেছেন আর হাতিরঝিল প্রকল্পের কারণে হারিয়েছেন নিজ বাড়ি। ক্ষতিপূরণ পাবেন বলে শুনেছেন। কিন্তু দৌড়াদৌড়ির ঝামেলায় আর পাওয়া হয়নি। তাই এটিই এখন তাঁর স্থায়ী নিবাস।
এমনই নানা কারণে যাঁদের স্বজনরা দেশে নেই, দেশে থাকলেও কাছে নেই কিংবা পাশে নেই, প্রৌঢ় বয়সে তাঁদের আশ্রয় হয়ে দাঁড়ায় ওল্ডহোম বা বৃদ্ধনিবাস। পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা বা নিঃসঙ্গতার কারণে বৃদ্ধনিবাসই হয় তাঁদের বাসস্থান। এমনই এক প্রতিষ্ঠান বাংলা প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান পরিচালিত প্রবীণ নিবাস ও হাসপাতাল। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধিত এ স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত। দেশের প্রাচীনতম ও বৃহৎ এ প্রবীণ কল্যাণ প্রতিষ্ঠান সব শ্রেণীর প্রবীণদের শারীরিক, মানসিক, আবাসিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পুনর্বাসনমূলক সেবাদানের পাশাপাশি বার্ধক্য বিষয়ে অবহিত, সংবেদনশীল ও তৎপর করতে কাজ করে। বার্ধক্য জীবনের একটি স্বাভাবিক পরিণতি। সমাজ ও সভ্যতা বিনির্মাণে প্রবীন জনগোষ্ঠীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। সুযোগ পেলে প্রবীণরাও অভিজ্ঞতার আলোকে দেশ ও সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই অধ্যক্ষ ডা. এ কে এম আবদুল ওয়াহেদ ১৯৬০ সালের ১০ এপ্রিল প্রতিষ্ঠা করেন এ প্রতিষ্ঠানটি। ইতিমধ্যে এর অগ্রযাত্রার ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে।
প্রবীণ নিবাস : প্রবীণদের বসবাসের জন্য এখানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে একটি ছয়তলা ভবন নির্মিত হয়েছে। এ নিবাসে বর্তমানে ২৮ জন প্রবীণ বাস করেন। তাঁদের আবাসনের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে এ প্রতিষ্ঠান। আছে প্রার্থনা কক্ষ, গ্রন্থাগার, টেলিভিশন ও ইনডোর গেইমসের সুবিধা। গ্রন্থাগারে আছে সাহিত্য, ইতিহাস, অর্থনীতি ও দর্শনবিষয়ক প্রচুর বই, ম্যাগাজিন ও সাময়িকী পড়ার সুবিধা। প্রতিবছর প্রকাশিত হয় প্রবীণ হিতৈষী সংঘের জার্নাল 'প্রবীণ হিতৈষী পত্রিকা'। প্রবীণদের সেবা প্রদানে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে দুজনকে দেওয়া হয় মমতাময় ও মমতাময়ী প্রবীণ সেবা পুরস্কার।
প্রবীণ হাসপাতাল : এ হাসপাতালে জরুরি বিভাগসহ ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসসেবা চালু আছে। কম খরচে প্রবীণ ও কম বয়সীদেরও চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে প্রবীণদের পাঁচ টাকা এবং অন্যদের ৩০ টাকায় দেওয়া হয় প্রেসক্রিপশন। বর্তমানে হাসপাতালে ১৫ জন ডাক্তার কর্মরত আছেন। এখানে ৩০ শতাংশ দরিদ্র প্রবীণকে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
'বার্ধক্যে ব্যক্তি যেমন মানসিকভাবে নিঃসঙ্গ বোধ করেন, তেমনি তখন চিকিৎসাসেবাও তাঁর জন্য অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়। তাই বয়স্কদের সামাজিক আশ্রয়ের পাশাপাশি স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিও এ প্রতিষ্ঠানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।' বললেন হাসপাতাল পরিচালক ডা. শেখ লুৎফর রহমান। ৩৫ বছর ধরে এখানে দায়িত্বরত এ প্রবীণ চিকিৎসক আরো বলেন, 'বয়স্কদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কাজটি আমি বেশ আনন্দের সঙ্গে করছি।'
প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আশরাফুল আলম মাসুম জানান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে তাঁরা বার্ষিক বরাদ্দ পান ৫৫ লাখ টাকা। জেরিয়াট্রিক ইনস্টিটিউট স্থাপন, উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণ, প্রবীণ ক্লাব ও ডে-কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠাসহ আরো নানা পরিকল্পনার কথা জানালেন সংঘের মহাসচিব ক্যাপ্টেন (অব.) এ কে এম শামসুল হক।
কথা হলো আবু জাফর গিফারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক শিক্ষক রহিমা খাতুনের সঙ্গে। তিনি শোনালেন তাঁর জীবনের গল্প_একমাত্র ছেলে লন্ডনে পড়ালেখা করে আর মেয়ে স্বামীসহ কানাডায়। স্বামী মারা গেছেন আর হাতিরঝিল প্রকল্পের কারণে হারিয়েছেন নিজ বাড়ি। ক্ষতিপূরণ পাবেন বলে শুনেছেন। কিন্তু দৌড়াদৌড়ির ঝামেলায় আর পাওয়া হয়নি। তাই এটিই এখন তাঁর স্থায়ী নিবাস।
এমনই নানা কারণে যাঁদের স্বজনরা দেশে নেই, দেশে থাকলেও কাছে নেই কিংবা পাশে নেই, প্রৌঢ় বয়সে তাঁদের আশ্রয় হয়ে দাঁড়ায় ওল্ডহোম বা বৃদ্ধনিবাস। পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা বা নিঃসঙ্গতার কারণে বৃদ্ধনিবাসই হয় তাঁদের বাসস্থান। এমনই এক প্রতিষ্ঠান বাংলা প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান পরিচালিত প্রবীণ নিবাস ও হাসপাতাল। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধিত এ স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত। দেশের প্রাচীনতম ও বৃহৎ এ প্রবীণ কল্যাণ প্রতিষ্ঠান সব শ্রেণীর প্রবীণদের শারীরিক, মানসিক, আবাসিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পুনর্বাসনমূলক সেবাদানের পাশাপাশি বার্ধক্য বিষয়ে অবহিত, সংবেদনশীল ও তৎপর করতে কাজ করে। বার্ধক্য জীবনের একটি স্বাভাবিক পরিণতি। সমাজ ও সভ্যতা বিনির্মাণে প্রবীন জনগোষ্ঠীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। সুযোগ পেলে প্রবীণরাও অভিজ্ঞতার আলোকে দেশ ও সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই অধ্যক্ষ ডা. এ কে এম আবদুল ওয়াহেদ ১৯৬০ সালের ১০ এপ্রিল প্রতিষ্ঠা করেন এ প্রতিষ্ঠানটি। ইতিমধ্যে এর অগ্রযাত্রার ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে।
প্রবীণ নিবাস : প্রবীণদের বসবাসের জন্য এখানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে একটি ছয়তলা ভবন নির্মিত হয়েছে। এ নিবাসে বর্তমানে ২৮ জন প্রবীণ বাস করেন। তাঁদের আবাসনের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে এ প্রতিষ্ঠান। আছে প্রার্থনা কক্ষ, গ্রন্থাগার, টেলিভিশন ও ইনডোর গেইমসের সুবিধা। গ্রন্থাগারে আছে সাহিত্য, ইতিহাস, অর্থনীতি ও দর্শনবিষয়ক প্রচুর বই, ম্যাগাজিন ও সাময়িকী পড়ার সুবিধা। প্রতিবছর প্রকাশিত হয় প্রবীণ হিতৈষী সংঘের জার্নাল 'প্রবীণ হিতৈষী পত্রিকা'। প্রবীণদের সেবা প্রদানে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে দুজনকে দেওয়া হয় মমতাময় ও মমতাময়ী প্রবীণ সেবা পুরস্কার।
প্রবীণ হাসপাতাল : এ হাসপাতালে জরুরি বিভাগসহ ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসসেবা চালু আছে। কম খরচে প্রবীণ ও কম বয়সীদেরও চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে প্রবীণদের পাঁচ টাকা এবং অন্যদের ৩০ টাকায় দেওয়া হয় প্রেসক্রিপশন। বর্তমানে হাসপাতালে ১৫ জন ডাক্তার কর্মরত আছেন। এখানে ৩০ শতাংশ দরিদ্র প্রবীণকে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
'বার্ধক্যে ব্যক্তি যেমন মানসিকভাবে নিঃসঙ্গ বোধ করেন, তেমনি তখন চিকিৎসাসেবাও তাঁর জন্য অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়। তাই বয়স্কদের সামাজিক আশ্রয়ের পাশাপাশি স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিও এ প্রতিষ্ঠানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।' বললেন হাসপাতাল পরিচালক ডা. শেখ লুৎফর রহমান। ৩৫ বছর ধরে এখানে দায়িত্বরত এ প্রবীণ চিকিৎসক আরো বলেন, 'বয়স্কদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কাজটি আমি বেশ আনন্দের সঙ্গে করছি।'
প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আশরাফুল আলম মাসুম জানান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে তাঁরা বার্ষিক বরাদ্দ পান ৫৫ লাখ টাকা। জেরিয়াট্রিক ইনস্টিটিউট স্থাপন, উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণ, প্রবীণ ক্লাব ও ডে-কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠাসহ আরো নানা পরিকল্পনার কথা জানালেন সংঘের মহাসচিব ক্যাপ্টেন (অব.) এ কে এম শামসুল হক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন