রবিবার, ১১ মার্চ, ২০১২

সবুজের গালিচায় প্রাণবন্ত আড্ডা


প্রাককথন
দায়িত্বটি আমার ওপর অর্পিত হয়েছে আজ থেকে ১১ দিন আগে। লিখব লিখব করে এতগুলো দিন কেটে গেল। এর মধ্যে সম্পাদক, লেখক-পাঠক অনেকেরই সঙ্গে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছি- হ্যাঁ, আজই লিখছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, সদ্য একটি খবরের কাগজে যোগদান করেছি বলে রিপোর্টারসুলভ ব্যস্ততা, মনস্তাত্বিক অলসতা- সবকিছু এড়িয়ে অবশেষে লেখার সময় পেলাম।

প্রস্তাবটি প্রথমে তানজিল রিমনের কাছ থেকে এসেছিল এবং এতে আমারও সায় ছিল। তা হল- শিশু কিশোর দ্বীন দুনিয়ার পাঠক-লেখকরা বইমেলাকে সামনে রেখে একত্র হব। আমরা যারা ঢাকায় আছি এবং ঢাকার বাইরে যারা থাকেন- ফেব্রুয়ারির গ্রন্থমেলা সকলের কাছাকাছি হওয়ার একটি সুযোগ। এক পর্যায়ে তানজিল তার সংগঠন ‘ফুটতে দাও ফুল’ এর শিশু উৎসব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল এবং আমিও চুপসে গেলাম। তারপরও ১০ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার আমরা মিলিত হলাম। আর এর পেছনে অনেকখানি কৃতিত্বই যার, তিনি হলেন কবি জিসান মেহবুব। ঢাকার বাইরে ভৈরবে অবস্থান করলেও সবার সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনিই এগিয়ে এলেন এবং আমরা তার আহবানে সাড়া দিলাম।

অতপর আড্ডা…
যথারীতি জিসান মেহবুবই সবার আগে পৌঁছুলেন। তার সঙ্গে ছিলেন তন্ময় রাশেদ, হাসান বিন হাফিজ ও মোর্শেদ আলম। তারপর তানজিল এবং আমি। অনেক ডাকাডাকি করে খোন্দকার নুরুল একা উম্মেহানীকে পাওয়া গেল। এলেন সা’দ বিন আর্দ্ব্ও। একসঙ্গে মধ্যাহ্ন ভোজ সেরে শুরু হল আড্ডা পর্ব। আড্ডাস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে সবুজ ঘাসের চত্বর। এর মধ্যে হাজির হলেন তানিম ইশতিয়াক। অনাবিল আনন্দের আবাহনে শুরু হল আমাদের আলাপন। সঞ্চালনায় আমি জাহিদ রুমান।

 প্রথমে পরিচিতি পর্ব। সবাই যে যার নাম-পরিচয় উপস্থাপন করল। বেশির ভাগ নামই পরস্পরের চেনা। আর অচেনা হলে নামের সঙ্গে অবয়ব মিলিয়ে নিলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখলেন জিসান মেহবুব। সম্মিলনের সাফল্যের জন্য আমরা তাকে অভিনন্দিত করলাম। তারপর চলল স্মৃতিচারণ। একে একে সবাই প্রকাশ করল নিজের ফেলে আসা জীবনের গল্প। কীভাবে লেখালেখি শুরু, কেমন করে শিশু কিশোর দ্বীন দুনিয়ার সঙ্গে পরিচয়, প্রথম লেখাই বা কবে ছাপা হল- আরও কত কথা। প্রত্যেকে ব্যক্ত করল তার সৃষ্টিশীল স্বপ্নময় জীবনের অম্ল-মধুর স্মৃতি-অনুভূতি। আমরা তন্ময় হয়ে শুনলাম, ভাবলাম। ফাঁকে ফাঁকে চলল স্বরচিত লেখাপাঠ। বিশেষ করে তানিম ইশতিয়াকের ‘ঘোড়ার ডিম’ বিষয়ক তিনটি লেখা সকলের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা কুড়াল। এর মধ্যে আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন নারায়ণ চন্দ্র রায় ও সোহেল রানা বীর। উপস্থিতির সংখ্যা এক অঙ্ক ছাড়িয়ে দুই  অঙ্ক স্পর্শ করল।

তানিম ইশতিয়াক ক্যাম্পাস থেকে প্রকাশিত ‘পতাকা’ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক। সে পতাকা’র জানুয়ারি সংখ্যা কিনলে ফেব্রুয়ারি সংখ্যা সৌজন্য দেওয়া হবে এমন ঘোষণা দিল। অনেকেই তাতে সানন্দে অংশগ্রহণ করল। ঘোষণা এল অমর একুশে গ্রন্থমেলায় শিশু কিশোর দ্বীন দুনিয়ার লেখকদের প্রকাশিত বইয়ের ব্যাপারেও। মেলায় এসেছে জিসান মেহবুবের নিসর্গটা কাব্য হবে (সাহিত্যদেশ) ও গোমর-ফাঁস (প্রতিভা প্রকাশ) এবং তানজিল রিমনের এক তালি ভাই বল্টু (সাহস পাবলিকেশন্স)।

আসরের নামাজের বিরতি শেষে আবার শুরু হল আড্ডা। তখন সুয্যির উত্তাপ কমে এসেছে। আড্ডার কিছু খন্ডচিত্র ধরে রাখা হল ক্যামেরার স্মৃতিতে। এরপর আলোচনা হল শিশু কিশোর দ্বীন দুনিয়াকে ঘিরে। এর অতীত, বর্তমানের চিত্র এবং ভবিষ্যতের প্রত্যাশা নিয়ে সবাই মতামত দিল। উপস্থিত আমরা সবাই নিয়মিত লিখব এবং নিজ অবস্থান থেকে পত্রিকার পাঠক সৃষ্টিতে উদ্যোগী হব বলে অঙ্গীকারাবদ্ধ হলাম।

শিশু কিশোর দ্বীন দুনিয়া কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে আমাদের ভাবনা সবার জন্য তুলে ধরা হল:

     পত্রিকার সম্পাদনা পর্ষদে উদ্যমী তরুণ কাউকে রাখা যেতে পারে। অতীতে যেটি ইতিবচিক ভূমিকা রেখেছিল বলে আমরা মনে করি।
    প্রচ্ছদ এবং লেখার আধেয় (Contents) আরও শিশু-কিশোর উপযোগী হওয়া চাই।
      পত্রিকা প্রকাশ ও প্রেরণে আরও বেশি সময় সচেতনতা আশা করি।
    লেখার মান যাচাইয়ে আরও যত্নশীলতা দাবি করি। সংকলিত লেখার সংখ্যা কম হওয়া ভাল।
    আগের নিয়মিত লেখকদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
    পূর্বের মতো বিষয়ভিত্তিক বিশেষ সংখ্যা (বাবা-মা, নদ-নদী, নিসর্গ- প্রকৃতি, নবীন লেখক-লেখিকা) প্রকাশ করা যেতে পারে।
    বার্ষিক পাঠক-লেখক সম্মেলন হওয়া চাই।

বর্তমানে তোমাদের পাতা, কবিতামালা, নবীন হাতের কলম হতে বিভাগগুলো পত্রিকার পাঠকপ্রিয়তার শীর্ষে। দেখা যায়, নিয়মিত বিভাগ কেন্দ্রিক পত্রিকার একটি পাঠক-লেখক গোষ্ঠী থাকে। তাই জগাখিচুড়ি, সবজান্তা দাদুর আসর, এসো হাত পাকাই, শব্দ গঠন, জানতে চাই এর মতো নিয়মিত বিভাগগুলো ফিরিয়ে আনা যেতে পারে।

আড্ডার একেবারে শেষ মুহূর্তে আমাদের মধ্যে উপস্থিত হন পাংশার প্রবীণ কবি মুহাম্মদ ফিরোজ হায়দার। তিনি আবারো শিশু কিশোর দ্বীন দুনিয়ায় লিখবেন বলে জানালেন এবং পাংশার সাহিত্য সম্মেলনে আমাদের দাওয়াত দিলেন। এই প্রবীণ কবির দরাজ কণ্ঠের কাব্যপাঠ এবং একটি কবিতাকান্ত গোধূলি আমাদের আড্ডায় সমাপ্তির সুর তুলল। অস্তায়মান সুয্যির শেষ আলোকবিন্দু, দিবা-রাত্রির অদ্ভুত সন্ধি, মুয়াজ্জিনের আহবান আমাদের আলাপনে ইতি ঘটাল। একটি প্রাণবন্ত আড্ডার মুগ্ধ অনুভূতি নিয়ে ফের দেখা হবে এই আশায় আমরা ছুটে চলি যে যার গন্তব্যে……।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

অর্কিড কাঞ্চনে মুগ্ধতা

পৌষের এক কুয়াশামোড়ানো সকালে প্রকৃতির একটু সবুজ ছোঁয়া পেতে গিয়েছিলাম রাজধানীর রমনা পার্কে। শীতের চাদর ফুঁড়ে এক চিলতে রোদের ঝিলিক ভারী মিষ্টি ...