প্রতিদিন খবরের কাগজের প্রথম পাতায় চোখ বুলিয়ে দিনের কাজ শুরু করি। কাগজে কী দেখি- পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু, ফ্লাইওভার ধ্বসে নিরীহ মানুষের প্রাণহানি, দুই শীর্ষনেত্রীর পারস্পরিক তর্কযুদ্ধ- কাদা ছোড়াছুড়ি, প্রকল্পে দুর্নীতি, পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ-সমাবেশ, পুলিশের রণপ্রস্তুতি এরপর হরতাল-পিকেটিং-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ-গ্রেপ্তার- এমনি নানা দুঃসংবাদ, আঘাত-প্রতিঘাতের ধ্বংসকাব্যে ঠাসা প্রতিদিনের কাগজের পাতা। ভীতি, অনিশ্চয়তা আর দুর্ভাবনায় ঘেরা তাই প্রতিটি সকাল। কখনো কখনো ভাবি- একটু আলো কিংবা ভালোর ঠিকানা বুঝি কাগজওয়ালাদের জানা নেই।
এত কিছুর মধ্যেও প্রতি বছর ডিসেম্বর মাস এলে আমরা ‘বিজয়’ এর কথা ভাবি। বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা- শব্দগুলো আমাদের সামনে জীবন্ত হয়ে ওঠে নতুন দ্যোতনা নিয়ে। আনন্দে উদ্বেল হয়ে কিংবা শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্মরণে আমরা গেয়ে উঠি বিজয়ের গান- পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল... মুক্তির মন্দির সোপান তলে...।
হ্যাঁ, এরই মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ৪১ বছর কেটে গেছে। দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা, যোগাযোগ, শিল্প-বাণিজ্য, সাহিত্য-সংস্কৃতিসহ সর্বত্র আমূল পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। সময়ের সঙ্গে আমরা অনেকখানি বদলে গেছি। তবু ডিসেম্বর মাস এলে যে প্রশ্নটা সবচেয়ে জোরালো হয়ে উঠে- শৃঙ্খল মুক্তির যে দুর্বার শপথে একাত্তরে আমরা জীবনবাজি রেখেছিলাম, ত্যাগ করেছিলাম নিজের সর্বস্ব; সেই লক্ষ আদৌ অর্জিত হয়েছে কি? আমরা কি পেয়েছি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, শিক্ষা-সাংস্কৃতিক মুক্তি, জীবনের স্বাভাবিক নিরাপত্তার গ্যারান্টি? আমাদের সার্বিক অবস্থান আজ কোথায়? আমরা কি বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছি? পরনির্ভরতা আর বিদেশি ঋণের বোঝা কেন আমাদের কাঁধে চেপে আছে? সার্বিক দুরবস্থার উত্তরণের আকাক্সক্ষা আমাদের মধ্যে আছে কি? নাকি রাজনীতির নামে আমরা কেবল হানাহানি, স্বার্থলিপ্সা, আত্মচিন্তা আর সংঘাতে লিপ্ত থেকেছি?




.jpg)
