মাথার ওপর নির্মল
আকাশ, উজ্জ্বল রোদে সোনালি ঝিলিক খেলে নুয়ে
পড়ে পরিপুষ্ট ধানের শীষ। এরপর বাতাসে হিমভাব, জীবনানন্দের ‘রূপশালী ধানভানা রূপসীর
শরীরের ঘ্রাণ’ কিংবা পাড়া-গাঁয়ে নতুন ধানের গন্ধে উৎসবের আনন্দবার্তা; এই বাংলার চিরচেনা
হেমন্ত। কুয়াশার চাদরে ঢাকা হেমন্তের এমন মনোরম দিনে সবুজপাতার কোলে একগুচ্ছ হালকা
বেগুনি ফুলের উচ্ছ্বাস আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে বাড়তি পাওয়া।
কার্তিক মাসে দেবকাঞ্চন গাছে ফুল ফুটতে শুরু করে, পাতার ফাঁকে ডালগুলো ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। স্নিগ্ধ সৌরভ সঙ্গে আকর্ষণীয় পাঁচটি বেগুনি পাপড়ির সমাহারে দেবকাঞ্চন (Bauhinia purpurea) হেমন্তের প্রকৃতিতে সৌন্দর্যের এক ভিন্ন মাত্রা তৈরি করে। হালকা বেগুনি ছাড়াও এর পাপড়ি মৃদু রক্তিম, গোলাপি বা সাদাটে হতে পারে। তবে হালকা বেগুনি রঙের দেবকাঞ্চনই বেশি চোখে পড়ে। ঠিক গুচ্ছে নয়, প্রতি শাখায় কয়েকটি করে ফুল থাকে। পাপড়িগুলো সন্নিবিষ্ট নয়, কিছুটা বিচ্ছিন্ন। মাঝারি আকারের দেবকাঞ্চন গাছে শীতের মাঝামাঝি পর্যন্ত ফুল থাকতে পারে।
কার্তিক মাসে দেবকাঞ্চন গাছে ফুল ফুটতে শুরু করে, পাতার ফাঁকে ডালগুলো ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। স্নিগ্ধ সৌরভ সঙ্গে আকর্ষণীয় পাঁচটি বেগুনি পাপড়ির সমাহারে দেবকাঞ্চন (Bauhinia purpurea) হেমন্তের প্রকৃতিতে সৌন্দর্যের এক ভিন্ন মাত্রা তৈরি করে। হালকা বেগুনি ছাড়াও এর পাপড়ি মৃদু রক্তিম, গোলাপি বা সাদাটে হতে পারে। তবে হালকা বেগুনি রঙের দেবকাঞ্চনই বেশি চোখে পড়ে। ঠিক গুচ্ছে নয়, প্রতি শাখায় কয়েকটি করে ফুল থাকে। পাপড়িগুলো সন্নিবিষ্ট নয়, কিছুটা বিচ্ছিন্ন। মাঝারি আকারের দেবকাঞ্চন গাছে শীতের মাঝামাঝি পর্যন্ত ফুল থাকতে পারে।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ঘরে-বাইরে উপন্যাসে আমরা পাই হেমন্তে কাঞ্চন ফুলের সৌন্দর্যের এক অনুপম চিত্র: ‘আমার সেই শোবার ঘরের ভাঙা খাঁচাটির ভিতর থেকে যখন সেই হেমন্ত-মধ্যাহ্নের খোলা আলোর মধ্যে বেরিয়ে এলুম, তখন এক দল শালিক আমার বাগানের গাছের তলায় অকস্মাৎ কী কারণে ভারি উত্তেজনার সঙ্গে কিচিমিচি বাধিয়েছে; রাস্তার দুই ধারে সারি সারি কাঞ্চন গাছ অজস্র গোলাপি ফুলের মুখরতায় আকাশকে অভিভূত করে দিয়েছে....আতপ্ত নিশ্বাস ঐ কাঞ্চন ফুলের গন্ধের সঙ্গে মিশে আমার হৃদয়ের উপরে এসে পড়ছে। আমার মনে হল, আমি আছি এবং সমস্তই আছে এই দুইয়ে মিলে আকাশ জুড়ে যে সংগীত বাজছে সে কী উদার, কী গভীর, কী অনির্বচনীয় সুন্দর!’
দেবকাঞ্চনের বিন্যস্ত
সজোড় পাতা এর সৌন্দর্যের অনুপম বৈশিষ্ট্য। এটি পত্রমোচী বৃক্ষ। শীতের শেষে পাতা ঝরে
যায়, বসন্তে নতুন পাতার প্রাচুর্যে ডালপালা ভরে ওঠে। একসময় শিমের মতো চ্যাপ্টা ফল হয়।
এর ফলের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল হঠাৎ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে বীজ অনেক দূরে ছড়িয়ে পড়ে।
বীজ থেকে সহজেই চারা গজায়। ঢাকায় রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, সংসদ ভবন সংলগ্ন
বিজয় সরণি, আজিমপুর রোড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন পাশে দেবকাঞ্চন গাছের
দেখা মেলে।
দেবকাঞ্চন ছাড়াও
কাঞ্চনের প্রধান দু’টি প্রজাতি হল বসন্তের রক্তকাঞ্চন (Bauhinia
veriegata) এবং শ্বেতকাঞ্চন (Bauhinia
acuminata). সবগুলোই
এশিয়া বিশেষত দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রজাতি।
দেবকাঞ্চনের ওষুধি
গুণও রয়েছে। এর ফল, বীজ, মূল, বাকল,পাতা ইত্যাদি অংশ নানা রোগের প্রতিষেধক। বিশেষ করে
ডায়রিয়া, ডায়াবেটিস, হাঁপানি, ক্ষত ও ব্যথানাশক হিসেবে এগুলোর ব্যবহার ফলপ্রসু। ভারত,
পাকিস্থান, শ্রীলংকা ইত্যাদি দেশে প্রাচীন, আদিবাসী সমাজে এ ধরনের চিকিৎসা প্রচলিত
ছিল।
(১৫ জানুয়ারি, ২০১২ দৈনিক সমকালে প্রকাশিত)

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন