শুক্রবার, ১১ জানুয়ারি, ২০১৩

এই গল্পটি কাল্পনিক



বয়েস ঠিক কত হলে ভালবাসা নামক অনুভূতিটা মানুষের মনে জাগ্রত হয়, তা জানি না । তবে বিশ বছর বয়সে আমি প্রথম ভালবাসার অস্তিত্ব অনুভব করেছিলাম। তা কোনো মানব বা মানবীর ডাকে নয়, বরং আমাকে ভুলিয়েছিল বুনোফুলের গন্ধ। একটু একটু করে ওই গন্ধ প্রবেশ করেছে আমার মনের গভীর থেকে আরো গভীরে। হলদে ফুলের কোমল রূপ আর মিষ্টি ঘ্রাণ আমাকে করেছে মোহিত, মুগ্ধ। তাই তো আমি ওকে ডেকেছি ‘কনকচাঁপা’ নামে। কনকচাঁপাই প্রথম আমার জন্য সাজিয়েছিল ভালবাসার আরতি। ওর মায়াময় আহ্বানে আমার হৃদয়ে নববসন্ত জেগেছিল, গেয়ে উঠেছিল কোকিল পাখি আর স্বপ্নগুলো রঙিন হয়েছিল কৃষ্ণচূড়া, শিমুল ও পলাশের রক্তিমতায়। আমি ওর সরল মনের গল্পমুখরতায় মিশে গেছি নির্ভয় উচ্ছ্বাসে।

: কনকচাঁপার গন্ধ-ছোঁওয়া বনের অন্ধকারে
  সন্ধ্যা কাটে, কাব্য খোঁজে ছন্দ বারে বারে
  ছন্দ পেয়ে মন যে খোঁজে গন্ধভেজা নাম
  কনকচাঁপা বলেই আজি তোমাকে ডাকলাম।
: সাঁঝের মায়ায় কনকচাঁপাই হলাম না-হয় আজ
  দারুণ তোমার কথার কারুকাজ
  সুয্যি নামটি তোমার জন্য কালোর বিপরীত
  যার আলোতে অন্ধকারে চাঁদ এত সুন্দর!







: আলোয় না-হয় পুরো আকাশ রাঙিয়ে দিলাম ভোরে
  কিন্ত শোনো তোমার থেকে সুয্যি তো খুব দূরে!
: মিথ্যে কথা, সুয্যি দেখি ঘুমোয় মেঘের পাশে
  হাত বাড়ালেই জানালা দিয়ে বাসায় চলে আসে।

: ঝরাপাতায় চড়ে যদি আমি তোমার ঘরে
  কী বলবে তারপরে?
: তোমার ছোঁয়ায় বাধার প্রাচীন আঁধার যেন কাটে
  মনন, চেতন ঋদ্ধ করো দীঘল চারুপাঠে
  মহৎ জীবন, দীপ্ত স্বপন গড়ো ভালোয় ভালোয়
  লোকের মনও ভরিয়ে দিয়ো ভালবাসার আলোয়।
: চাইছ যখন হারিয়ে না-যাই ভ্রান্তি বেড়াজালে
  করব আঘাত হাজার যুগের আঁধার নায়ের পালে
  আলোয় মোড়া সত্যিকারের দীপ্র মানুষ হব
  চিরটাকাল তোমার উদার আকাশ মাঝে রব।
: স্বপ্নগুলো পূর্ণতা পাক তব।


প্রেমের প্রথম দিনগুলি কেটে গেছে খুব দ্রুত, অবচেতনে। তবে মনের ভেতরের নিস্তরঙ্গ বোধ ঘুচে গেছে চিরতরে, সবখানে জেগেছে সুখময়তার ঝলমলে ঢেউ। আমি দু’চোখের কোণে মেখেছি লাল-নীল জরি। কথকতায়, আলাপনে, লুকোচুরি, গানে-গানে এরই মধ্যে জীবনতরী অনেক পথ বয়ে গেছে। তবু নিত্য ওর ভাবনা আমার চিত্তে দিয়ে যায় মায়ার দোলা।


কনকচাঁপা আমাকে ভালবাসে কি না বুঝি না তবে সে আমার কাছাকাছি ছিল বিকেল, সন্ধ্যা এবং রাত্রির সবক্ষণে, সবখানে। ওখনও সাতসকাল, সারা দুপুর জুড়ে ও আমার পাশে থাকে। আচ্ছা, ভালবাসা কি শুধু বলে-কয়ে, ঘোষণা দিয়ে হয়? নিভৃতে, গোপনে কারো হাত ধরে পথহাঁটা যায় না? আমি বলি- যায়। না-জানুক তবু ও আমার অনেক প্রিয়, অনেক আপন। কনকচাঁপাকে আমি কোনো সীমিত বৃত্তে বাঁধতে চাইনি, চাই না। ও ঘুরে বেড়াক বৃক্ষের শাখায় শাখায়, পাখির নীলাভ পাখায়, প্রকৃতির উদার রাজ্যে। ইচ্ছে মতোন ও গায়ে মাখুক ভোরের শিশির, ঠাণ্ডা বাতাস কিংবা ফুলের রেণু। 



মনে মনে, কানে কানে কিংবা মুঠোফোনে ওর সঙ্গে প্রায়ই কথা হয়, তবু কখনও বলিনি, বলব না- ভালবাসি। হোক অপ্রকাশিত, তবু এ ভালবাসা চিরদিনের, চিরকালের। ওর দীপ্ত উপস্থিতি সতত মূর্ত আমার মনের দৃষ্টিসীমায়।
কনকচাঁপা অবয়বে পুরোটা নারীর মতোই। তবে ওকে আমার মনে হয় যেন কোনো সুশোভিত ফুল কিংবা বহতা নদী। ওর অজানা রঙ-গন্ধ আছে, আছে পাপড়ি-বৃতির সৌন্দর্য। নদীর মতো ওর চলার ছন্দও আছে। যেমন আছে ভরা জোয়ারের বান, তেমনি ভাটার টান। তাই ওকে আমি খুঁজি-ফিরি নদীর প্রবহণে, পুষ্পের কোমলতায়।

দেখতে দেখতে দিন চলে গেছে বহু দূর। সময়ের প্রয়োজনে কিংবা জীবনের আয়োজনে আমিও কিছুটা দূরে। তবে থেমে নেই চির প্রবহমাণ কালের চাকার আবর্তন। সে ছুটছে আর ছুটছে। সময়ের সাথে এমনি করে কনকচাঁপা তার নিজ পথ ধরে হেঁটে যাবে। আমিও হাঁটতে থাকব আমার ভূবনপথে। তবু দেখা হবে. কথা হবে। দু’জনে মুখোমুখি হব ভোরের সূর্যোদয়ে, জমাট শিশিরের শুভ্রতায় চলতি পথে, শান্ত নদীর তীরে কিংবা দূর পাহাড়ের ছায়ায় জেগে-ওঠা ছোট্ট সবুজ গাঁয়ে। রাখালিয়া বাঁশির সুরে কোনো এক মোহনীয় বিকেলে মনে পড়ে যাবে এইসব স্মৃতির-প্রীতির কাব্য। পূর্ণিমা চাঁদের আলোয় কিংবা রুপোলি তারা-ভরা রাতে দু’জনে সুর করে গাইব হারানো দিনের গান। শেষরাত্রির ঝিঁঝিঁ-ডাকা নিঃস্তব্ধ ক্ষণেও কনকচাঁপা আমারই থাকবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

অর্কিড কাঞ্চনে মুগ্ধতা

পৌষের এক কুয়াশামোড়ানো সকালে প্রকৃতির একটু সবুজ ছোঁয়া পেতে গিয়েছিলাম রাজধানীর রমনা পার্কে। শীতের চাদর ফুঁড়ে এক চিলতে রোদের ঝিলিক ভারী মিষ্টি ...