বুধবার, ২ জানুয়ারি, ২০১৩

সাংবাদিকতার স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্যই নীতিমালা প্রয়োজন: আরেফিন সিদ্দিক




আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক, বর্তমানে উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের গণমাধ্যম, শিক্ষা-সংস্কৃতি, গণতন্ত্র, মানবধিকার ও মানুষের তথ্য স্বাধীনতার পক্ষে চিন্তা ও বৃদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনে তিনি রাখছেন সোচ্চার ভূমিকা। 

আরেফিন সিদ্দিক পঁয়ত্রিশ বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় নিয়োজিত। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি’র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের সদস্য হিসেবেও কাজ করেন। 

তিনি ১৯৭৫ সালে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় এমএ এবং ১৯৮৫ সালে ভারতের মহীশুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয় ও কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয় হতে উচ্চতর পেশাগত প্রশিক্ষণ লাভ করেন। তাঁর জন্ম ১৯৫৩ সালের ২৩শে অক্টোবর, ঢাকায়। 

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, অনলাইন মিডিয়ার প্রসার, তথ্যপ্রযুক্তি এবং গণমাধ্যমের সাম্প্রতিক প্রবণতা নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন জাহিদ রুমান


বলা যায়, দেশ এখন এক ধরনের সংকটকাল অতিক্রম করছে। একদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ এগিয়ে চলছে। অন্যদিকে দেশের প্রধান দু’টি রাজনৈতিক ধারার মধ্যে তীব্র মতবিভেদ, সংঘাতময় অবস্থা লক্ষ করা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে গণমাধ্যম কতটা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে?

যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের প্রশ্নে রাজনৈতিক মতপার্থক্য কিছুটা আছে কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষ এ ব্যাপারে একমত। এই বিচার প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে কেন দেরি হচ্ছে দেশের মানুষ সে বিষয়ে সোচ্চার। আদালতে বিচারাধীন বিষয়টিতে মিডিয়া নিজস্ব সুযোগের আওতায় ভূমিকা পালন করছে। জনগণকে তারা সবসময় এ বিষয়ে যথাযথ তথ্য দিয়ে অবহিত রাখছে। আমি মনে করি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি গণমাধ্যম খুব ভালোভাবেই প্রচার করছে।

সংঘাতময় পরিস্থিতির উত্তরণে মিডিয়া কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে?

গণতান্ত্রিক দেশে রাজনীতিতে মতপার্থক্য, মতবিরোধ থাকবে এটাই স্বাভাবিক।  কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় যে মতপার্থক্য একটি সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি করে। সেখানে সন্ত্রাস এসে যোগ হয়। কোনো রাজনৈতিক দল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত হবে এটি কিছুতেই প্রত্যাশিত নয়। এটি গণতন্ত্রের সাথে সঙ্গতিপূর্ণও নয়। মতবিরোধকে ঐক্যবদ্ধ জায়গায় নিয়ে যেতে আলোচনা বা সংলাপের সুযোগ আছে। মিডিয়া এই জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।  জনগণের সামনে সঠিক তথ্য তুলে ধরে মিডিয়া জনমত তৈরি করতে পারে। গণতন্ত্রে জনমতই শক্তিশালী হাতিয়ার যা  রাজনীতি থেকে সন্ত্রাস দূরীকরণে ভূমিকা রাখবে। আর গণমাধ্যম যদি সত্যিকার অর্থে এই কাজটি করতে পারে তাহলে আমার ধারণা এসব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।

যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রসঙ্গে আসি- একজন বিচারপতির ই-মেইল, স্কাইপি সংলাপ সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। প্রশ্ন হল মিডিয়া এটা করতে পারে কি না? এটা কি ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের পর্যায়ে পড়ে?

সাংবাদিকতার সাথ গোয়েন্দাগিরির কোনো সম্পর্ক নেই। একজন সাংবাদিক সাংবাদিকতার সকল নীতিমালা মেনে সাংবাদিকতা করবেন এটিই প্রত্যাশিত । সাংবাদিকতার সাথে গোয়েন্দাগিরির কোনো সুযোগ নেই। এখানে যেভাবে স্কাইপির সংলাপ হ্যাকিং করা হয়েছে এবং যেভাবে পত্রিকায় প্রকাশিত করা হয়েছে তা গণতন্ত্রের মৌলিক নীতমালার পরিপন্থী। আশা করব আমাদের সাংবাদিকবৃন্দ তারা যে পত্রিকাতোই কাজ করুক না কেন সাংবাদিকতার মৌলিক নীতিমালা মেনে সাংবাদিকতা করবেন।

পত্রিকাগুলোর যুক্তি এতে বিচারিক স্বচ্ছতা ও জনস্বার্থ জড়িত আছে।

এ প্রশ্নের উত্তর এটুকু বলা যায় মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা সাংবাদিকতার অন্যতম পূর্বশর্ত। কোনো যুক্তিই সাংবাদিকতাকে গোয়েন্দাগিরির পর্যায়ে নিতে পারে না।

সাংবাদিকতার প্রবণতাই এমন যে- Bad news is good news. ইতিবাচক, উন্নয়ন সংবাদ গণমাধ্যমে গুরুত্ব পায় না। পাঠকও ভাল খবরের প্রতি আগ্রহী নয়। এর কারণ কী?

সাংবাদিকতার একটি সহজবোধ্য সংজ্ঞা আছে। সেটি হচ্ছে ‘ডিজরাপশন অব স্ট্যাটাস কৌ’। স্বাভাবিকতা বিঘ্নিত হলে সেটাই সংবাদ। অতএব মোটমুটিভাবে একথা বলা যায় যেখানে অস্বাভাবিক কিছু ঘটে যেমন- একটি দুর্ঘটনা বা দুর্নীতি; সেটার সংবাদমূল্য বেশি। যে কারণে ব্যাড নিউজ ইজ গুড নিউজ।

তার মানে এই নয় যে, ইতিবাচক ঘটনা- কোনো একটি বড় অর্জন, অসাধারণ সাফল্য, সেগুলো স্বাভাবিকতার বাইরে। সুতরাং  শুধু নেতিবাচক ঘটনার মধ্যে সংবাদ মূল্য আছে আর ইতিবাচক কিছুর সংবাদ মূল্য নেই এটি ভ্রান্ত ধারণা। এই প্রবণতাটা আছে কারণ তারা সংবাদের শুধু একটা দিকই দেখে। খারাপ দিক যেমন ভাল সংবাদ হিসেবে পরিগণিত হয় বিপরীতভাবে ইতিবাচক বিষয়ও উচ্চ সংবাদমূল্য পাওয়া উচিত।

দেশে কিছুদিন পর পরই এক একটি বড় ঘটনা ঘটছে। তখন সবাই ফলাও করে সেটা প্রচার করে। কিন্তু পরে আর সেই ঘটনার ফলোআপ বা আপডেট পাওয়া যায় না। গণমাধ্যমের এই প্রবণতাকে আপনি কীভাবে দেখছেন? যেমন- রুমানা মঞ্জুর, ইলিয়াস আলী কিংবা রামু ট্র্যাজেডি নিয়ে এখন তেমন কিছু দেখা যায় না।

এটি আমাদের সাংবাদিকতার বড় একটি দুর্বলতার দিক। প্রতিনিয়ত যে ঘটনাগুলো ঘটে অনেক সময় সেগুলোর ফলোআপ স্টোরি আসে না। আর এর ফলে জনগণের মন থেকেও এটি হারিয়ে যায়। এটি হচ্ছে গণমাধ্যমের কাজ- একটি ঘটনাযে ঘটেছে সেটার কী হচ্ছে? তদন্ত চলছে কি না? দুর্ঘটনায় যারা আহত হয়েছেন তারা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না? এই যে বিষয়গুলো আছে সেগুলো সবসময় আপডেট করা এটাই গণমাধ্যমের বড় দায়িত্ব। কিন্তু এই ব্যাপারে আমাদের দেশের গণমাধ্যমগুলো দুর্বল। এখানে ফলোআপ-স্টোরি দেওয়ার প্রবণতা কম। কিন্তু তারপরও আশার কথা কিছু কিছু গণমাধ্যম মাঝে মাঝে ঘটনার একটা ফলোআপস্টোরি দিয়ে থাকে। আমি মনে করি এই দিকটাতে গণমাধ্যমগুলোর বিশেষ মনোযোগ দেওয়া দরকার।

দেশে অনলাইন মিডিয়ার ব্যাপক প্রসার ঘটছে। এটা তথ্যপ্রবাহে ক্ষেত্রে কতটা ইতিবাচক?

তথ্যপ্রযুক্তি যেভাবে সারা পৃথিবীতে সম্প্রসারিত হচ্ছে তাতে আমাদের অনলাইন মিডিয়া, নিও-মিডিয়া ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করবে। বিশেষ করে আমাদের তরুণ প্রজন্ম তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে বেশ সচেতন। তাই সম্প্রচার মাধ্যম অপেক্ষা অনলাইন মাধ্যম বেশি জনপ্রিয়তা পাবে। ইন্টারনেট সুবিধা থাকায় কম্পিটার, ল্যাপটপ এমনকি সেলফোনের মাধ্যমে তারা মূহূর্তেই খবর পড়তে পারে। এই সম্প্রসারিত অনলাইন মাধ্যম ইতিবাচক বলেই আমি মনে করি। তবে মনে রাখতে হবে প্রযুক্তির যেমন ইতিবাচক দিক আছে তেমনি নেতিবাচক দিকও আছে। অপব্যবহার নয়, অবশ্যই আমরা প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করব। এই শিক্ষাটাই তরুণ প্রজন্মকে দিতে হবে। সাথে সাথে কিছুটা নীতিমালার প্রয়োজন আছে। যে নীতিমালা ব্যক্তিকে প্রযুক্তির অপব্যবহার থেকে নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু একই সাথে আমি বলতে চাই এ-নিয়ন্ত্রণ যেন স্বাধীনতা নষ্ট না করে। শুধু প্রযুক্তির অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্যই নীতিমালা করা প্রয়োজন।

সরকার অনলাইন মিডিয়ার জন্য একটি খসড়া নীতিমালা করেছে। গণমাধ্যমবান্ধব নয় বলে সাংবাদিকরা যেটির সমালোচনা করছেন। একই সঙ্গে সম্প্রচার নীতিমালার কথাও বলা যায়। গণমাধ্যমের জন্য নীতিমালার বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

আমি মনে করি, সাংবাদিকতার স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য একটি নীতিমালা থাকবে। আর স্বাধীনতা বলতে আমরা কখনোই নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা মনে করি না। স্বাধীনতা বলার সাথে সাথে সেখানে চলে আসে দায়িত্বশীলতার কথা। বস্তুনিষ্ঠতা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে আমরা স্বাধীনতা উপভোগ করব। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে অনলাইন মিডিয়াগুলো তাদের নিজস্ব নীতিমালায় পরিচালিত হয়। বাংলাদেশে  যখন নীতিমালার কথা আসে তখন এটা ভাবার কারণ নেই যে এটাকে গোড়া থেকে শুরু করতে হবে। বাইরের পৃথিবীর মতো আমরাও আমাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, বাস্তবতার নিরিখে আমরা নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারি। আমি মনে করি, গণমাধ্যম  কর্তৃপক্ষ  নিজেরাই নীতিমালা প্রণয়ন করে সে অনুযায়ী  তাদের গণমাধ্যম পরিচালনা করতে পারেন। সারা পৃথিবীতে এ নিয়মেই গণমাধ্যম পরিচালিত হয়। সরকারও আলাদাভাবে নীতিমালা প্রণয়ণ করতে পারে। সরকারের নীতিমালা প্রয়োজন-সাপেক্ষে সংযোজন-বিয়োজন করা যেতে পারে।

কেউ কেউ ব্লগ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জন্যও আইনের কথা বলছেন।

আইন প্রণয়ন করা ,আইন থাকা এবং আইনের প্রয়োগ এগুলোর মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রেই আইন আছে, আইনের বাহুল্য আছে। আইনের কমতি আমি অনেক সময় দেখি। কিন্তু সেই আইনের বাস্তবায়ন আছে কি না সেটাই হচ্ছে মূল বিষয়। ব্লগ ,সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের স্বাধীনতায় কোনো নিয়ন্ত্রণ আসুক এটা আমি কখনোই চাই না। তবে নীতিমালা বলতে যদি বোঝায় যে সঠিক ব্যবহার, সুব্যবহার ,সুপ্রয়োগ তাহলে বৃহত্তর পরিসরে কিছু নীতিমালা থাকতে পারে। কিন্তু কোনোভাবেই যেন সেই নীতিমালা স্বাধীনতা রুদ্ধ না করে এটিই আমি বারবার বলতে চাচ্ছি।

বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশে সাংবাদিকতার তিনটি পর্যায় রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে সাংবাদিকতা প্রবর্তিত হয়েছে রাজনীতিবিদদের হাতে। রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে গণমাধ্যম ব্যবহৃত হয়েছে। এরপরে রাজনৈতিক সাংবাদিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে এবং বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার পক্ষে কথা বলা হয়েছে। এখন চলছে কর্পোরেট মালিকানার যুগ। ‘কর্পোরেট মালিকানা’র সঙ্গে ‘বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা’র যে দ্বন্দ্ব তার ফলাফল কী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

কর্পোরেট মালিকানার বিষয়টি এখন সময়ের সাথে সাথে বিস্তৃতি লাভ করছে। গণমাধ্যমে বিনিয়োগ এখন একটি বড় ধরনের বিনিয়োগের পর্যায়ে চলে গেছে। বড় বিনিয়োগের কারণেই কর্পোরেট মালিকানার বিষয়টি এসেছে। এটি একটি যৌক্তিক প্রশ্ন যে, কর্পোরেট মালিকানার সঙ্গে বস্তুনিষ্ঠ সাংবদিকতার যে দ্বন্দ্ব কীভাবে তার নিরসন করা যায়। এটা খুবই স্বাভাবিক, একটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা তাদের প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে কাজ করবে। কিন্তু আমি মনে করি কর্পোরেট মালিকানায় থাকা সত্ত্বেও গণমাধ্যমের একটি গ্রহণযোগ্য বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখা যায়। যদি কর্পোরেট কর্তৃপক্ষ যদি অন্ততপক্ষে এই সিদ্ধান্ত নেন যে, সাংবাদিকতার ক্ষেত্র সেখানে সম্পাদক, সাংবাদিকরা কাজ করবেন তাদের ওপর আর কোনো কর্পোরেট নিয়ন্ত্রণ আনা যাবে না। যেমন আমি সবসময় বলব সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে আনা ঠিক না। বস্তুনিষ্ঠতা ও সাংবাদিকতার বিষয়টি অত্যন্ত কঠিন। প্রতিদিন একটি পত্রিকা এবং তার সাংবাদিকদের বস্তুনিষ্ঠতার পরীক্ষা দিতে হয়ে এবং এই পরীক্ষায় তাদের পাশ করে আসতে হয়।

বাংলাদেশে অনলাইন মিডিয়ার ভবিষ্যৎ কেমন দেখছেন? পশ্চিম ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে অনলাইন মিডিয়া বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে  টিকে থাকতে অনলাইন মাধ্যমগুলো কীভাবে অগ্রসর হতে পারে?

মুদ্রণমাধ্যম যখন শুরু হল তখন পৃথিবীতে একটা পরিবর্তন এল। যখন সম্প্রচার মাধ্যম এল তখন অনেকেই আশঙ্কা করেছিল যে, সম্প্রচার মাধ্যম এত দ্রুত সংবাদ এবং নিখুঁতভাবে সংবাদ প্রচার করে তো এখন বোধহয়  মুদ্রণ মাধ্যম আর থাকবে না। দেখা গেল সম্প্রচার মাধ্যমের বিস্তৃতির সাথে সাথে মুদ্রণ মাধ্যমের বিস্তার আরো বেশি হল। অর্থাৎ মানুষ সম্প্রচার মাধ্যমে খবর জেনে সেটা পত্রিকায় বিস্তারিতভাবে জানতে চায়। এখন যে অনলাইন মিডিয়া সম্প্রসারিত হচ্ছে এগুলো কোনোভাবেই অন্য প্রচারমাধ্যমকে প্রভাবিত করবে না বলে আমি মনে করি। বরং এখন যেটা দেখতে পাচ্ছি, এখন সব মিডিয়াই অনলাইন হয়ে গেছে। একমুখী একটা যাত্রা আমরা লক্ষ্য করছি। প্রিন্টমিডিয়া এখন অনলাইনে চলে আসছে। ইলেকট্রনিক মিডিয়া এখন অনলাইনে চলে আসছে। তথ্যপ্রযুক্তি যত সমৃদ্ধ হবে অনলাইন মাধ্যম তত জনপ্রিয় হবে। আজকের মুদ্রণ মাধ্যমগুলোকেও আমি ইলেকট্রনিক  মিডিয়াই বলব। কারণ এরা যেভাবে অনলাইনে সংবাদ প্রচার করছে এবং পরবর্তীতে প্রিন্ট করছে তাদেরকে শুধু মুদ্রণমাধ্যম বললে যথার্থ হবে না।

অনলাইন মাধ্যমের বিস্তারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শিক্ষা এবং প্রযুক্তি সুবিধা প্রাপ্তির বাধা কী উপায়ে অতিক্রম করা যায়?

শিক্ষার হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর মানুষের তথ্যের  প্রয়োজনীয়তাও বেড়ে যাবে। পৃথিবী এগিয়ে যাবে। হয়তো নতুন নতুন আরো মাধ্যম এসে যুক্ত হবে। কোনো মাধ্যমকেই আমরা বলতে পারি না যে তার সময় ফুরিয়ে যাবে। অনলাইনের চাহিদা আরও বাড়বে।

আমাদের দেশে প্রযুক্তির সুযোগ সীমিত এটা ঠিক। তবু সীমাবদ্ধতাগুলো আস্তে আস্তে দূর হচ্ছে। প্রযুক্তির মূল্যও দিন দিন কমে আসছে। এটা সময়ের দাবি যে, প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। অনলাইনমাধ্যম টিকে থাকবেই কারণ ভবিষ্যতে সব ধরনের যোগাযোগই হবে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটভিত্তিক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

অর্কিড কাঞ্চনে মুগ্ধতা

পৌষের এক কুয়াশামোড়ানো সকালে প্রকৃতির একটু সবুজ ছোঁয়া পেতে গিয়েছিলাম রাজধানীর রমনা পার্কে। শীতের চাদর ফুঁড়ে এক চিলতে রোদের ঝিলিক ভারী মিষ্টি ...