বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২২

নীলপারুলের শোভা


সাতসকালে বাতাসে হিমভাব, মাঠে মাঠে নতুন ধানের গন্ধে মোড়ানো হেমন্তের প্রকৃতি। এসব দিনে কোনো মুক্ত অঙ্গনে চলতে চলতে চারপাশে যেন একটাই রং খেলা করে; সবুজ ছাড়া রঙের তেমন বৈচিত্র্য নজরে আসে না। তরুরাজ্যে ধীরপায়ে শীতের রুক্ষতা নামতে শুরু করে, ফুল ফোটানোর বদলে হাতছানি দেয় পাতা ঝরার বেলা। এমন সময়ে প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য হেমন্তের এক অনিন্দ্য উপহার নীলপারুলের শোভা। সবুজ পাতার কোলে বেগুনি-সাদায় মেশানো গুচ্ছ গুচ্ছ ফুলের বর্ণালি ভীষণ নজরকাড়া। শক্ত ও দীর্ঘ লতা অন্য কোনো গাছ বেয়ে অনেক ওপরে ওঠে। নীলপারুল ছাড়াও তাই আরেকটি নাম লতাপারুল। পাতা কচলে দেখলে রসুনের ঘ্রাণ পাওয়া যায় বলে এটি পরিচিত রসুন্দি নামেও; ইংরেজি নামও সমার্থক, গারলিক ভাইন। নামে নীলপারুল হলেও আমাদের গান-কবিতার অনুষঙ্গ, এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী পারুলের সঙ্গে এ ফুলের কোনো সম্পর্ক নেই। গড়নের সঙ্গে কিছুটা মিল থাকায় এমন নামকরণ হতে পারে। নীলপারুল বাংলার নিজস্ব ফুল নয়, দক্ষিণ আমেরিকা থেকে এটি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের নানা প্রান্তে। 

এক হেমন্তে রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে প্রকৃতিবিষয়ক সংগঠন তরুপল্লবের গাছ চেনানোর অনুষ্ঠানে নীলপারুলের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। হেমন্তের প্রায় পুষ্পহীন প্রকৃতিতে হালকা বেগুনি ফুলের এই আয়োজন দেখার মতো। ফানেলের মতো দলের মাথায় পাঁচটি ছড়ানো পাপড়ি। বড় থোকায় ফোটা এই ফুল বেগুনি থেকে ধীরে ধীরে সাদা হয়ে আসে। গাঢ় সবুজ পাতা যেন ফুলগুলোকে ঘিরে থাকে। ফুল ও পাতার সৌন্দর্যের জন্যই এর জনপ্রিয়তা। নানা ওষুধি গুণাগুণ রয়েছে। বৈজ্ঞানিক নাম Cydista aequinoctialis.আমাজনের আদিবাসীদের মধ্যে এ ফুল নিয়ে নানা বিশ্বাস প্রচলিত। তাদের ধারণা, এটি দুর্ভাগ্য দূর করে। তাই শিকারে বের হওয়ার সময় সঙ্গী কুকুরকে এর পাতার পানীয় পান করায়। বাগানের পাশাপাশি ঘরের ফটক, ছাদবাগান বা বারান্দায় চমৎকারে বেড়ে উঠতে পারে এ লতানো গাছ। তাই হেমন্তে পুষ্পশোভা উপভোগ করতে চাইলে আপনার বাগানেও এই লতা জায়গা পেতে পারে।

সোমবার, ২১ মার্চ, ২০২২

স্মৃতিগন্ধা টগরসন্ধ্যা











বিকেলের ছায়ারোদে মুখর নগর

আমাদের জোড়া হাতে ছয়টি টগর
পাশাপাশি দুটি মন ভালোবাসাময়
চোখে চোখ রেখে যেন থমকে সময়।
দুটি প্রাণে এত সুধা আলাপেও মিল
কার্জন হলজুড়ে কথার মিছিল।

ভীষণ মিষ্টি তুমি মায়াভরা চোখ
তাকালে ছড়িয়ে পড়ে অসীম আলোক
অফুরান প্রীতিকথা চির নির্ভয়
তোমার দু'চোখে পাই আশা, আশ্রয়।

প্রেমের মধুর রঙে হাসে ঝিলমিল
তোমার অধর পাশে স্নেহমাখা তিল
আমাকে ভীষণ টানে ছড়ায় আবেগ
কাঁপা হাতে ছুঁয়ে দিলে ঝরে পড়ে মেঘ।
চোখকাড়া মুখ তব মনকাড়া নাম
কণ্ঠেও মুগ্ধতা ঝরে অবিরাম।

কথাগানে আলাপনে সময় গড়ায়
পাতা দোলে, ফুলগুলো সুবাস ছড়ায়
আমাদের ভালো লাগে বাগানবিলাস
নীলমণি নীলে ভরে এপাশ-ওপাশ
মণিমালা নীলাকাশ গোলাপে রাঙায়
কাঠবাদামের পাতা সবুজ ছায়ায়
কী যে শোভা মনোলোভা কোমল পাতার
তোমার পরশে মনে বাজছে সেতার।
আমাদের ঘিরে থাকে আরও কত ফুল
কোকিকের কুহুতানে পরান আকুল।

গোধূলি দিনের স্রোতে বয়ে আনে ভাটা
সন্ধ্যার ছায়াপথে শুরু হয় হাঁটা
আমরাও ছুটে চলি সেই পথ ধরে
প্রাণময় কথামালা পাতা হয়ে ঝরে।
বেলাশেষে পাখি হয়ে তুমি যাও নীড়ে
আমি মিশি আগামীর স্বপ্নের ভিড়ে।

বুধবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

ওগো মোর অপরাজিতা


কতদিন ছিলে দূর অপরিচিতা

রক্তজবার স্নেহে হয়েছ মিতা
আজ থেকে তুমি মোর অপরাজিতা।

কুসুম কোমল ওই লতার কোলে
নীলে ঝিলমিল ফুল যখন দোলে
হাওয়ার কাঁপনে জাগে কত না কথা
আমার মনেও তুমি আলোকলতা।

নয়ন জুড়াও তুমি অসীম নীলে
নিজেকে হারাই সেই রঙমিছিলে
নিবিড় আবেগে মনও রাঙিয়ে দিলে।

কাছে এসো ওগো মোর অপরাজিতা
বেঁধে দেব তব চুলে মায়াবী ফিতা
আমি আজ সকালের ও প্রজাপতি
তোমার পাপড়ি ছুঁয়ে করি মিনতি:

ভালোবাসাময় নীল আলো ছড়িয়ে
অপরাজিতার মতো নিও জড়িয়ে
সারাটা জীবন রঙে দিও ভরিয়ে।

৩ ফাল্গুন ১৪২৮
চট্টগ্রাম
 

মঙ্গলবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

ছাতিমের ঘ্রাণমাখা রাত্রি

তুমি তো আমাকে অনেক কিছু উপহার দাও

মিও ভাবতে থাকি তোমাকে কী দেওয়া যায়।

কার্তিকের এই বৃষ্টিভেজা রাতে দখিনা বাতাসে ভেসে আসা ছাতিমের ঘ্রাণ মনে করিয়ে দেয়
এই ঋতুতে এর চেয়ে ভালো উপহার আর হয় না।
তাই আমি তোমাকে দিতে চাই ছাতিমের সুগন্ধি,
ছাতিমের গন্ধমাখা দীঘল রাত্রি।

আহা, বাতাস মাতাল করা এই ঘ্রাণ নাকের ভেতর দিয়ে পৌছে যায় হৃদয় থেকে মরমের গহীনে;
এ যেন মাটির পৃথিবীতেই স্বর্গীয় অনুভূতি।
এই রাত আমার সামনে মেলে ধরে বহুরাত্রি আগে ফেলে আসা ছেলেবেলা;
মধুর সুবাসে মোহিত এক কিশোরের মুগ্ধতা
সেই গন্ধশোভিত বেলায় আমার হৃদয় ভরে উঠত কত রঙে, কত স্বপ্নে, ভালো লাগা কিশোরীর কাছে যাওয়ার কল্পনায়।

এই রাত্রি, এই সুগন্ধি, এই মুহূর্ত কতটা অমূল্য কেবল হৃদয়ই জানে। কারণ এর কোনো বেচাকেনা হয় না, এসব মিলবে না কোনো দোকানেই। তার চেয়েও অপূর্ব, এই আনন্দ একান্তই আমার, এই সুখের রাজ্যে আমার একার রাজত্ব। এই মুহূর্তটি মিলবে কেবল এক্ষণেই, কাল পর্যন্ত ধরে রাখার উপায় নেই।

তবে তোমার কাছে কী করে পৌছাই এই উপহার:
ছাতিমের গন্ধমাখা দীঘল রাত্রি। কী করে তোমাকে দেই আমার আনন্দরাজ্যের একচিলতে সুখ?
চর্যাপদের কবিদের মতো আমারও ভরসা তাই শব্দ, হৃদয় উৎসারিত পঙতিমালায় লেখা থাক এইসব আনন্দ। এই উপহার বিনিময় হোক ঘ্রাণমাখা শব্দে, মোহময় অনুভবে।

২ কার্তিক ১৪২৮
সন্দ্বীপ।

রক্তজবার পদ্য

১. কোকিলের কুহুতানে ভ্রমরের গুঞ্জনে 

এসেছে ফাগুনবেলা।

গাছেতে নতুন কুঁড়ি ফুলের মিষ্টি রূপে

বসেছে রঙের মেলা।

শিমুলের কচি ডালে একজোড়া টিয়ে যেন

মেতেছে প্রেমের সভায়।

অনেক ফুলের শোভা ডাকছে তবুও আমি

মেতে আছি রক্তজবায়।। 

২. চাপ লেগে ডাক গেছে ভুলে

দেখলাম ঘুমলাগা চোখ খুলে

বিপুল স্বপ্নজড়ানো নাতিদীর্ঘ ভ্রমণ শেষে

ক্লান্ত পান্থপাদপ ফের উঠেছে জেগে জোড়া রক্তজবার স্মৃতির আবেশে

নাগকেশরেরর ওই তামাটে পাতার কোলে

স্মৃতিকাতর মন কাকে খোঁজে অনুক্ষণ হৃদয় যেন বাসরলতার মতো দোলে।

প্রথম দেখার রক্তজবা









রঙিন ফুলের মায়ায় ভরা
শুভ্র আলোর প্রাতে
শান্ত মনে তোমার জন্য 
ছিলেম অপেক্ষাতে।

মন-কোকিলের কুহু সুরে
বাতাস তখন মাতে
তুমি এলে সদ্য ফোটা
রক্তজবা হাতে।

স্নিগ্ধ হেসে একজোড়া ফুল 
দিলে উপহার 
প্রশান্তিতে আমার মনে
আনন্দ ঝংকার।

সদ্য ফোটা রক্তজবার 
হলদে ক'টি রেণু
মন-মননে বাজায় যেন
অপার প্রীতির বেনু।

ফুল দুটিকে আলতো করে
বুকপকেটে রেখে
কাটল বেলা অনেক ফুলের
রঙের চমক দেখে।

কল্পনাতে তোমার পায়ে
পরিয়ে রূপার নুপূর
ফুলের শোভায় পাখির সভায়
নেমে এলো দুপুর।

ফেরার পথে ফুল দুটিকে 
দেখছি ছুঁয়ে হাতে 
মুগ্ধ হৃদয় ভাবছে যেন
চলছি তোমার সাথে।

পেরিয়ে বিকেল, পাখির ডানায়
নামল প্রথম সন্ধ্যে
বদলে যাওয়া জীবন পেলাম 
তোমার স্মৃতির গন্ধে।

আজও আমার বাগানজুড়ে
কত না ফুল ফোটে
সব ছাপিয়ে রক্তজবার
ছবিই ভেসে ওঠে।

ভালোবাসার ফুলদানিতে 
বুকের খুবই কাছে
প্রথম পাওয়া রক্তজবা
যত্নে রাখা আছে।


অর্কিড কাঞ্চনে মুগ্ধতা

পৌষের এক কুয়াশামোড়ানো সকালে প্রকৃতির একটু সবুজ ছোঁয়া পেতে গিয়েছিলাম রাজধানীর রমনা পার্কে। শীতের চাদর ফুঁড়ে এক চিলতে রোদের ঝিলিক ভারী মিষ্টি ...