মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৩

রঙের পসরা সাজায় গ্রীষ্ম




আকাশে গনগনে সুয্যি, কাঠফাটা রোদ্দুরে তপ্ত বাতাস, ছায়াশূন্য পথে তৃষ্ণার্ত পথিক আর হঠাৎ করেই ঝড়ো হাওয়ার তোড়ে উন্মত্ত প্রকৃতি; এই যেন গ্রীষ্মঋতুর চিরচেনা রূপ। একটু খেয়াল করে দেখুন, রুদ্র গ্রীষ্ম কেবল আগুনই ঝরায় না, বাহারি ফুলের পসরা সাজিয়ে মনও কাড়ে। এ সময় নিষ্প্রাণ, রুক্ষতা ছাপিয়ে প্রকৃতি নিজেকে মেলে ধরে আপন মহিমায়।

গাছে গাছে কৃষ্ণচূড়া, জারুল, সোনালু থেকে শুরু করে কাঠগোলাপ, গন্ধরাজের যে বর্ণিল আয়োজন তার কি কোনো তুলনা হয়? তীব্র রোদে বৃক্ষছায়ায় ঝলমলে রঙের খেলা আর কখনো কখনো বাতাসে সোঁদা গন্ধ এ তো গ্রীষ্ম ঋতুরই দান। বোশেখ-জ্যৈষ্ঠে আমাদের বাগানে সুরভি ছড়ানো ফুলের তালিকাটিও বেশ বড়। 

প্রকৃতিবিদ দ্বিজেন শর্মার ফুলগুলি যেন কথাবইতে পাই গ্রীষ্মে বাহারি ফুলের উচ্ছ্বাসের এক অপূর্ব চিত্রায়ণ: কৃষ্ণচূড়ার লাল-কমলা, জারুলের হালকা বেগুনি, ক্যাশিয়ার গোলাপি-সাদা, পেল্টফরাম আর সোনাইলের হলুদ এবং বাতাসে ফেরে স্বর্ণচাঁপা শিরিষ হিজলের মধুগন্ধ, বাগানে উজ্জ্বলতা ছড়ায় রঙবেরঙের জবা রাধাচূড়া টগর, নানা রঙের ঘণ্টা ধুতরা কলকে, বনপথে ফোটে লুটকি কাঠমল্লিকা হিজল বরুণ।

গ্রীষ্মে ডালে ডালে চোখ-ধাঁধানো রঙের ঔজ্জ্বল্য ছড়ায় রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া। দীর্ঘ, প্রসারিত গাছে ফুলের প্রাচুর্যে লাল হয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস। এ যেন লাল রঙের এক মায়াবী ক্যানভাস, যা যে কারো চোখে এনে দেয় শিল্পের দ্যোতনা। শামসুর রাহমান লিখেছেন- আবার ফুটেছে দ্যাখো কৃষ্ণচূড়া থরে থরে শহরের পথে/ কেমন নিবিড় হয়ে।


এরপর আসে জারুলের কথা। গোটা দেহ জুড়ে তার বেগুনির স্নিগ্ধতা। সুন্দর. বিন্যস্ত পাপড়িতে অসাধারণ রঙের ছিটা। একই সঙ্গে ডালপালা জুড়ে থোকায় থোকায় ফোটে মায়াবী সোনালু। মেয়েদের কানফুলের মতো দেখতে হলুদে জড়ানো ফুলগুলো ছুঁয়ে যাবে আপনার দৃষ্টি। লাল-বেগুনি আর হলুদের এ মনোরম উল্লাস চোখে পড়ে ঢাকার রমনা পার্ক, আবদুল গণি রোড, মানিক মিয়া এভিনিউ, চন্দ্রিমা উদ্যান, বোটানিক্যাল গার্ডেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ সড়ক, রাস্তার ধারে। গ্রীষ্মে সারাদেশেই দেখা যায় একই চিত্র। কৃষ্ণচূড়া, সোনালু আর জারুলের সম্মিলিত সৌন্দর্য প্রাণভরে উপভোগ করতে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা দরকার এর সুদীর্ঘ বীথি। ঢাকায় কিংবা ঢাকার বাইরে এটি হতে পারে।

উঁচু গাছে সবুজপাতার ভাঁজে মোহনীয় রূপে ফোটে ক্যাশিয়া জাভানিকা। যাকে বাংলায় লাল সোনাইল নামে ডাকা হয়। গোলাপি আর সাদায় মেশানো গুচ্ছ গুচ্ছ ফুলের শোভাও আপনাকে টানবে। শুধু তাই নয়, পেল্টফরাম বা কনকচূড়ার আকাশছোঁয়া হলদে আভাও প্রশান্তি দেবে আপনার চোখে। হৃদয়ে সুখ জাগাবে স্বর্ণচাঁপা, কাঠগোলাপ, কাঁঠালচাঁপা, হিমচাঁপার সৌরভ ও বর্ণিলতা। এমন দিনে সুরভিরঙ্গন, সূর্যমুখী, মেঘশিরিষ, রাধাচূড়া, অঞ্জন আর মধুমঞ্জরীলতাকে  ভুলে থাকি কী করে?

রূপ-রঙ ও গন্ধের যূথবদ্ধতায় গ্রীষ্ম নিসর্গের এ আয়োজন নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য ভালবাসার এক অপার প্রাপ্তি। প্রকৃতির রুক্ষতা ও জীবনের যান্ত্রিকতা ভুলিয়ে যা আমাদের দেয় অপরিমেয় স্বস্তি, অনাবিল প্রশান্তি।  

     

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

অর্কিড কাঞ্চনে মুগ্ধতা

পৌষের এক কুয়াশামোড়ানো সকালে প্রকৃতির একটু সবুজ ছোঁয়া পেতে গিয়েছিলাম রাজধানীর রমনা পার্কে। শীতের চাদর ফুঁড়ে এক চিলতে রোদের ঝিলিক ভারী মিষ্টি ...