রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫

অর্কিড কাঞ্চনে মুগ্ধতা


পৌষের এক কুয়াশামোড়ানো সকালে প্রকৃতির একটু সবুজ ছোঁয়া পেতে গিয়েছিলাম রাজধানীর রমনা পার্কে। শীতের চাদর ফুঁড়ে এক চিলতে রোদের ঝিলিক ভারী মিষ্টি লাগছিল। মৎস্য ভবন গেট দিয়ে ঢুকে হাঁটতে হাঁটতে নজরে এলো নানারকম বৃক্ষরাজি। পান্থপাদপ, উদাল, সোনাপাতি, দেশি গাব, রক্তকাঞ্চনের ছায়া পেরিয়ে চোখে পড়ল অঞ্জন গাছ। শীতের এমন দিনে সব গাছই পুষ্পশূন্য, চলতি পথে ঝরাপাতার মেলা। পার্কের মহুয়া চত্বরের কাছাকাছি আসতেই দুটি গাছে ফুলের প্রাচুর্য দেখে থমকে দাঁড়াই। পুরো গাছজুড়ে বেগুনি ফুলের উচ্ছ্বাস। শাখায় শাখায় এমন নিবিড় প্রস্ফুটন ভীষণ নজরকাড়া। বাতাসে ভেসে আসছিল হালকা মিষ্টি ঘ্রাণ। পাঁচ পাপড়ির ফুলটির নাম অর্কিড কাঞ্চন। শীতের পুষ্পহীন প্রকৃতিতে এটি নিজের বর্ণিল অস্তিত্ব জানান দিয়েছে সগৌরবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্কিড কাঞ্চন (Bauhinia blakeana) সারাদেশে বেশ ছড়িয়ে পড়েছে। ছোট আকারের চিরসবুজ এ গাছ সবুজ পাতার সম্ভারে ছাতার মতো ছাউনি তৈরি করে।

আমাদের দেশে সাধারণত তিন ধরনের কাঞ্চন বেশি চোখে পড়ে- শ্বেতকাঞ্চন, দেবকাঞ্চন ও রক্তকাঞ্চন। এর মধ্যে শ্বেতকাঞ্চন প্রায় বছরব্যাপী ফুটলেও দেবকাঞ্চন হেমন্তে আর রক্তকাঞ্চন বসন্তে ফোটে। গাছের গড়ন, কাণ্ড, পাতা ও ডালপালার ক্ষেত্রে এই তিন কাঞ্চনের সঙ্গে অর্কিড কাঞ্চনের তেমন পার্থক্য নেই। ফুলের রং ও আকারেও রক্তকাঞ্চন (Bauhinia variegata) ও দেবকাঞ্চনের (Bauhinia purpurea) সঙ্গে এর মিল দেখা যায়। এ কারণে প্রথম দেখায় অর্কিড কাঞ্চনকে রক্তকাঞ্চন বা দেবকাঞ্চন মনে হতে পারে; বিশেষ করে রক্তকাঞ্চনের সঙ্গে এর সাযুজ্য বেশি। ফুল ফোটার ঋতু এবং রং খেয়াল করে এদের পার্থক্য বোঝা যেতে পারে। অর্কিড কাঞ্চনের রঙ বেশি গাঢ় এবং আমাদের দেশে অর্কিড কাঞ্চনের পূর্ণ প্রস্ফুটন চোখে পড়ে হেমন্তের শেষ থেকে শীতকালে। এমন মিলের অবশ্য যৌক্তিক কারণ রয়েছে। রক্তকাঞ্চন ও দেবকাঞ্চনের সংকরায়ন থেকেই অর্কিড কাঞ্চনের উদ্ভব বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।

অর্কিড কাঞ্চনের ইংরেজি নাম হংকং অর্কিড ট্রি। আমেরিকান জার্নাল অব বোটানির তথ্য অনুযায়ী, ১৮৮০ এর দশকে হংকং দ্বীপে এই ফুল প্রথম আবিষ্কৃত হয়। হংকংয়ের বৃটিশ গভর্নর উইলিয়াম ব্লেকের নামানুসারে পরে অর্কিড কাঞ্চনের নামকরণ হয় Bauhinia blakeana. চীনের এই বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের পতাকা এবং প্রতীকে স্থান পেয়েছে অর্কিড কাঞ্চনের পাঁচটি পাপড়ি। সংকর হওয়ায় প্রাকৃতিকভাবে এর বংশবিস্তার হয় না। সাধারণত কলম বা কৃত্রিমভাবে চারা উৎপাদন করা হয়। সৌন্দর্যের জন্য ফুলটি বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে সমাদৃত।

(লেখাটি ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২ কালবেলায় প্রকাশিত)

সোমবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৫

কামিনীর স্মৃতিমাখা সন্ধ্যা



কার্জন হলের ওই সবুজ চাদরে
ঝরা পাতা, বর্ণিল ফুলের আদরে
হাসিখুশি-ভরা সেই মায়াবী বিকেলে
গাছে গাছে চিক চিক রোদ্দুর খেলে।
ভালোবাসা জড়াজড়ি পাতায়, লতায়
হৃদয় উষ্ণ হলো কথায় কথায়।
তুমি ছিলে পাশে তাই আলো চারপাশে
বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস ছিল ঘাসে ঘাসে।

গোধূলির রং মেখে নামে সন্ধ্যে
আমরাও হেঁটে চলি সুরে-ছন্দে
স্মৃতির টিএসসিতে এক কাপ চায়ে
আবেগে মধুর হাওয়া জড়িয়েছি গায়ে।
ফুরায় না কথা তবু দিতে হয় যতি
আমাকে ভরালে প্রেমে ওগো মায়াবতী
ফিরে আসি সাথে নিয়ে কামিনীর সুখ
অপরাজিতায় রাঙা আমি কিংশুক।

শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৪

ছাতিমের ঘ্রাণমাখা রাত


আকাশে ঝলমলে সূর্য, দিগন্তজোড়া সাদা মেঘের আনাগোনায় অপূর্ব নীলের চিত্রলিপিতে আঁকা এখনকার প্রকৃতি। ক্যালেন্ডারের পাতায় শারদীয় দিন পেরিয়ে এসেছে হেমন্ত। ঋতুর পালাবদলে দুঃসহ উত্তাপ থেকে মিলছে একটু স্বস্তি, পল্লিগ্রামে সন্ধ্যারাতে পাওয়া যাচ্ছে কিছুটা শীতল আমেজ। হেমন্তের স্নিগ্ধ প্রকৃতিতে সন্ধ্যা নামতেই নাকে লাগে দূর থেকে ভেসে আসা ফুলের গন্ধ। চারপাশের বাতাস মাতাল করা এমন সুবাস কিছুতেই উপেক্ষা করা যায় না। রাতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেন বাড়তে থাকে সৌরভের মাত্রা। হেমন্তের রাতে হৃদয় আকুল করা সুবাস ছড়ানো এ ফুলের নাম ছাতিম। 
পাড়াগাঁয়ে শৈশব-কৈশোর কাটানো অনেকেরই জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এমন গন্ধমাখা বহু রাতের স্মৃতি। আমারও তার ব্যতিক্রম নয়। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘পথের পাঁচালী’র অপু ও দুর্গার মতো ছোটবেলায় এর সুরভিতে মুগ্ধ হলেও ফুলের নামটি জেনেছি বহু পরে। আমার শৈশবের সেই ছাতিমগাছটি এখন নেই, পথপাশে বেড়ে ওঠা বয়সী গাছটি আগেই কাটা পড়েছে। তবু মনে উজ্জ্বল হয়ে জেগে আছে সেসব দিনের বর্ণিল স্মৃতি। 
এখনো গ্রাম-শহর সর্বত্র ভালোভাবেই টিকে আছে ছাতিমগাছ। বনবাদাড়ে, লোকালয়ে এটি নিজে থেকেই বেড়ে ওঠে। নগরের বাগানেও সাদরে জায়গা পেয়েছে এই বৃক্ষ। শরতের শেষ থেকে হেমন্তজুড়ে গাছভরে থোকায় থোকায় ফুলে ফোটে। ফুল ছোট, তেমন উজ্জ্বল নয়। শাখায় শাখায় সাদা-সবুজাভ রঙে গুচ্ছে গুচ্ছে ফোটে বলে নজর এড়ায় না। অবশ্য ছাতিমের গন্ধ সবারই প্রিয় এমন নয়, উগ্র, কড়া বলে কারও কাছে এটা অপছন্দনীয়। ছাতিমের পাতাও বেশ দৃষ্টিনন্দন, ডালের আগায় একসঙ্গে ছয়-সাতটি পাতা মিলে অপূর্ব সুন্দর বিন্যাসে নিজেকে প্রকাশ করে। তাই ছাতিমের আরেক নাম সপ্তপর্ণ। পাতাগুলো গাছজুড়ে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত ছাতার মতো থরে থরে সাজানো। ফুলের বিপুল ঐশ্বর্যে, পাতার সুনিবিড় ছায়ায় সুউচ্চ ছাতিম তীব্রভাবে নিজের অস্তিত্ব ঘোষণা করে। কথাসাহিত্যিক বিপ্রদাশ বড়ুয়ার মতে, ‘হেমন্ত ও শীতের শূন্যতায় ছাতিম প্রবল প্রাণের প্রতীক।’ 
ছাতিমের বৈজ্ঞানিক নাম Alstonia scholaris। পড়ালেখার সঙ্গে যোগ আছে বলে দ্বিতীয় অংশের এমন নামকরণ। একসময় এর কাঠ দিয়ে ব্ল্যাকবোর্ড ও ছাত্রদের লেখার শ্লেট তৈরি করা হতো। ছাতিমগাছ নিয়ে আছে নানা উপকথা ও কিংবদন্তি। বিভিন্ন অঞ্চলে আদিবাসীরা এর তলায় বসতে বা এর ছায়া মাড়াতে চায় না। ছাতিমগাছের সঙ্গে শয়তানের যোগসূত্র আছে বলে অনেকের বিশ্বাস; তাই ইংরেজি নাম ডেভিলস ট্রি। আমাদের পুষ্পরাজ্যে হেমন্তের উজ্জ্বল প্রতিনিধি ছাতিম রাজধানীতেও সহজলভ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক, হাইকোর্ট প্রাঙ্গণসহ নানা জায়গায় এখন ছাতিমের শোভা-সুরভি উপভোগ করা যাবে।

প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২২, দৈনিক কালবেলা। 

বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২২

নীলপারুলের শোভা


সাতসকালে বাতাসে হিমভাব, মাঠে মাঠে নতুন ধানের গন্ধে মোড়ানো হেমন্তের প্রকৃতি। এসব দিনে কোনো মুক্ত অঙ্গনে চলতে চলতে চারপাশে যেন একটাই রং খেলা করে; সবুজ ছাড়া রঙের তেমন বৈচিত্র্য নজরে আসে না। তরুরাজ্যে ধীরপায়ে শীতের রুক্ষতা নামতে শুরু করে, ফুল ফোটানোর বদলে হাতছানি দেয় পাতা ঝরার বেলা। এমন সময়ে প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য হেমন্তের এক অনিন্দ্য উপহার নীলপারুলের শোভা। সবুজ পাতার কোলে বেগুনি-সাদায় মেশানো গুচ্ছ গুচ্ছ ফুলের বর্ণালি ভীষণ নজরকাড়া। শক্ত ও দীর্ঘ লতা অন্য কোনো গাছ বেয়ে অনেক ওপরে ওঠে। নীলপারুল ছাড়াও তাই আরেকটি নাম লতাপারুল। পাতা কচলে দেখলে রসুনের ঘ্রাণ পাওয়া যায় বলে এটি পরিচিত রসুন্দি নামেও; ইংরেজি নামও সমার্থক, গারলিক ভাইন। নামে নীলপারুল হলেও আমাদের গান-কবিতার অনুষঙ্গ, এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী পারুলের সঙ্গে এ ফুলের কোনো সম্পর্ক নেই। গড়নের সঙ্গে কিছুটা মিল থাকায় এমন নামকরণ হতে পারে। নীলপারুল বাংলার নিজস্ব ফুল নয়, দক্ষিণ আমেরিকা থেকে এটি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের নানা প্রান্তে। 

এক হেমন্তে রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে প্রকৃতিবিষয়ক সংগঠন তরুপল্লবের গাছ চেনানোর অনুষ্ঠানে নীলপারুলের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। হেমন্তের প্রায় পুষ্পহীন প্রকৃতিতে হালকা বেগুনি ফুলের এই আয়োজন দেখার মতো। ফানেলের মতো দলের মাথায় পাঁচটি ছড়ানো পাপড়ি। বড় থোকায় ফোটা এই ফুল বেগুনি থেকে ধীরে ধীরে সাদা হয়ে আসে। গাঢ় সবুজ পাতা যেন ফুলগুলোকে ঘিরে থাকে। ফুল ও পাতার সৌন্দর্যের জন্যই এর জনপ্রিয়তা। নানা ওষুধি গুণাগুণ রয়েছে। বৈজ্ঞানিক নাম Cydista aequinoctialis.আমাজনের আদিবাসীদের মধ্যে এ ফুল নিয়ে নানা বিশ্বাস প্রচলিত। তাদের ধারণা, এটি দুর্ভাগ্য দূর করে। তাই শিকারে বের হওয়ার সময় সঙ্গী কুকুরকে এর পাতার পানীয় পান করায়। বাগানের পাশাপাশি ঘরের ফটক, ছাদবাগান বা বারান্দায় চমৎকারে বেড়ে উঠতে পারে এ লতানো গাছ। তাই হেমন্তে পুষ্পশোভা উপভোগ করতে চাইলে আপনার বাগানেও এই লতা জায়গা পেতে পারে।

সোমবার, ২১ মার্চ, ২০২২

স্মৃতিগন্ধা টগরসন্ধ্যা











বিকেলের ছায়ারোদে মুখর নগর

আমাদের জোড়া হাতে ছয়টি টগর
পাশাপাশি দুটি মন ভালোবাসাময়
চোখে চোখ রেখে যেন থমকে সময়।
দুটি প্রাণে এত সুধা আলাপেও মিল
কার্জন হলজুড়ে কথার মিছিল।

ভীষণ মিষ্টি তুমি মায়াভরা চোখ
তাকালে ছড়িয়ে পড়ে অসীম আলোক
অফুরান প্রীতিকথা চির নির্ভয়
তোমার দু'চোখে পাই আশা, আশ্রয়।

প্রেমের মধুর রঙে হাসে ঝিলমিল
তোমার অধর পাশে স্নেহমাখা তিল
আমাকে ভীষণ টানে ছড়ায় আবেগ
কাঁপা হাতে ছুঁয়ে দিলে ঝরে পড়ে মেঘ।
চোখকাড়া মুখ তব মনকাড়া নাম
কণ্ঠেও মুগ্ধতা ঝরে অবিরাম।

কথাগানে আলাপনে সময় গড়ায়
পাতা দোলে, ফুলগুলো সুবাস ছড়ায়
আমাদের ভালো লাগে বাগানবিলাস
নীলমণি নীলে ভরে এপাশ-ওপাশ
মণিমালা নীলাকাশ গোলাপে রাঙায়
কাঠবাদামের পাতা সবুজ ছায়ায়
কী যে শোভা মনোলোভা কোমল পাতার
তোমার পরশে মনে বাজছে সেতার।
আমাদের ঘিরে থাকে আরও কত ফুল
কোকিকের কুহুতানে পরান আকুল।

গোধূলি দিনের স্রোতে বয়ে আনে ভাটা
সন্ধ্যার ছায়াপথে শুরু হয় হাঁটা
আমরাও ছুটে চলি সেই পথ ধরে
প্রাণময় কথামালা পাতা হয়ে ঝরে।
বেলাশেষে পাখি হয়ে তুমি যাও নীড়ে
আমি মিশি আগামীর স্বপ্নের ভিড়ে।

বুধবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

ওগো মোর অপরাজিতা


কতদিন ছিলে দূর অপরিচিতা

রক্তজবার স্নেহে হয়েছ মিতা
আজ থেকে তুমি মোর অপরাজিতা।

কুসুম কোমল ওই লতার কোলে
নীলে ঝিলমিল ফুল যখন দোলে
হাওয়ার কাঁপনে জাগে কত না কথা
আমার মনেও তুমি আলোকলতা।

নয়ন জুড়াও তুমি অসীম নীলে
নিজেকে হারাই সেই রঙমিছিলে
নিবিড় আবেগে মনও রাঙিয়ে দিলে।

কাছে এসো ওগো মোর অপরাজিতা
বেঁধে দেব তব চুলে মায়াবী ফিতা
আমি আজ সকালের ও প্রজাপতি
তোমার পাপড়ি ছুঁয়ে করি মিনতি:

ভালোবাসাময় নীল আলো ছড়িয়ে
অপরাজিতার মতো নিও জড়িয়ে
সারাটা জীবন রঙে দিও ভরিয়ে।

৩ ফাল্গুন ১৪২৮
চট্টগ্রাম
 

মঙ্গলবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

ছাতিমের ঘ্রাণমাখা রাত্রি

তুমি তো আমাকে অনেক কিছু উপহার দাও

মিও ভাবতে থাকি তোমাকে কী দেওয়া যায়।

কার্তিকের এই বৃষ্টিভেজা রাতে দখিনা বাতাসে ভেসে আসা ছাতিমের ঘ্রাণ মনে করিয়ে দেয়
এই ঋতুতে এর চেয়ে ভালো উপহার আর হয় না।
তাই আমি তোমাকে দিতে চাই ছাতিমের সুগন্ধি,
ছাতিমের গন্ধমাখা দীঘল রাত্রি।

আহা, বাতাস মাতাল করা এই ঘ্রাণ নাকের ভেতর দিয়ে পৌছে যায় হৃদয় থেকে মরমের গহীনে;
এ যেন মাটির পৃথিবীতেই স্বর্গীয় অনুভূতি।
এই রাত আমার সামনে মেলে ধরে বহুরাত্রি আগে ফেলে আসা ছেলেবেলা;
মধুর সুবাসে মোহিত এক কিশোরের মুগ্ধতা
সেই গন্ধশোভিত বেলায় আমার হৃদয় ভরে উঠত কত রঙে, কত স্বপ্নে, ভালো লাগা কিশোরীর কাছে যাওয়ার কল্পনায়।

এই রাত্রি, এই সুগন্ধি, এই মুহূর্ত কতটা অমূল্য কেবল হৃদয়ই জানে। কারণ এর কোনো বেচাকেনা হয় না, এসব মিলবে না কোনো দোকানেই। তার চেয়েও অপূর্ব, এই আনন্দ একান্তই আমার, এই সুখের রাজ্যে আমার একার রাজত্ব। এই মুহূর্তটি মিলবে কেবল এক্ষণেই, কাল পর্যন্ত ধরে রাখার উপায় নেই।

তবে তোমার কাছে কী করে পৌছাই এই উপহার:
ছাতিমের গন্ধমাখা দীঘল রাত্রি। কী করে তোমাকে দেই আমার আনন্দরাজ্যের একচিলতে সুখ?
চর্যাপদের কবিদের মতো আমারও ভরসা তাই শব্দ, হৃদয় উৎসারিত পঙতিমালায় লেখা থাক এইসব আনন্দ। এই উপহার বিনিময় হোক ঘ্রাণমাখা শব্দে, মোহময় অনুভবে।

২ কার্তিক ১৪২৮
সন্দ্বীপ।

অর্কিড কাঞ্চনে মুগ্ধতা

পৌষের এক কুয়াশামোড়ানো সকালে প্রকৃতির একটু সবুজ ছোঁয়া পেতে গিয়েছিলাম রাজধানীর রমনা পার্কে। শীতের চাদর ফুঁড়ে এক চিলতে রোদের ঝিলিক ভারী মিষ্টি ...