বাদল দিনের চালতা ফুল
চালতা ফুলের কমনীয়তা কদম-কেয়া-মালতীর চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। রূপবৈচিত্র্য, সৌকর্যে বাগানের যে কোনো ফুলের সঙ্গে এটি তুলনীয়। কিন্তু আমাদের ভোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে চালতা ফুলের মাধুর্য বরাবরই উপেক্ষিত থেকেছে। তাই ফল হিসেবেই লোকসমাজে এর যেটুকু পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা।আকাশ নীলের তারাখচা পথে বৃষ্টি পড়ে/
চালতা ফুলে ফলের বাগান মদির করে। (বিষ্ণু দে)
বর্ষা ঋতুর প্রথম ভাগে চালতা ফুল ফুটতে শুরু করে। আকারে বেশ বড়। দুধসাদা পাঁচটি মোটা পাপড়ি আর হলদে পরাগকেশরের সমাহার বড়ই দৃষ্টিনন্দন। ১৫-২০টি গর্ভকেশর তারার মতো সাজানো। গঠনবৈশিষ্ট্যে এটি ম্যাগনোলিয়ার ঘনিষ্ঠ। রূপসী চালতা ফুল বর্ষার বাতাসে ছড়ায় মৃদু সৌরভ। চিরসবুজ চালতা গাছ আকারে মাঝারি, বাকল লালচে ও মসৃণ। ডালপালা ওপরের দিকে ছড়ানো-ছিটানো। চালতা গাছের পাতার বিন্যাস এবং বৈচিত্র্যও দেখার মতো। টিয়া-সবুজ রঙের পাতা দীর্ঘাকৃতি, সমান্তরাল শিরায় পরিপূর্ণ এবং পাতার কিনার খাঁজকাটা। ফুলের পাপড়ি ঝরে যাওয়ার পর বৃতি একসময় ফলে পরিণত হয়। ফলের রঙ সবুজ, প্রায় গোলাকার, পাতার ফাঁকে বোঁটায় ঝুলে থাকে। শর-হেমন্তে ফল পাকে। ফলের স্বাদ টক-মিষ্টি বলে আচার-চাটনি-জেলি হিসেবে এটি বেশ উপাদেয় ও মুখরোচক। বিশেষ করে কাঁচা চালতার আচারের স্বাদ মনে এলে যে কারও জিভে জল আসে। চালতার কাঠ শক্ত ও টেকসই। নৌকা ও বন্দুকের বাট তৈরিতে ব্যবহারযোগ্য। বাকল ও পাতা নানা কাজে লাগে। তাছাড়া পেটের পীড়া ও জ্বর নিরাময়েও উপকারী।
আমাদের দেশের সর্বত্র চালতা গাছ দেখা যায়। বাড়ির আঙিনায় কিংবা বনে-জঙ্গলে অনাদরে দু'চারটা গাছ থাকাও বিচিত্র নয়। সুপরিকল্পিত বীথি না থাকলেও ঢাকায় বিচ্ছিন্নভাবে কিছু গাছ চোখে পড়ে। বলধা গার্ডেন, রমনা পার্ক, মুক্তাঙ্গন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চালতা গাছের দেখা মেলে। ভারতবর্ষ চালতার আদি নিবাস। বাংলাদেশ ছাড়াও নেপাল, শ্রীলংকা, আসাম ও মালয়ে প্রচুর পরিমাণে জন্মে। বৈজ্ঞানিক নাম ডিলেনিয়া ইন্ডিকা, ইংরেজি নাম এলিফ্যান্ট অ্যাপল। ফুল ও ফল ছাড়াও চালতা গাছ বৃক্ষ হিসেবে সৌন্দর্যে অনুপম। তাই শোভা বর্ধনের জন্যও এটি বাগানে লাগানো যেতে পারে।
(২৪ আগস্ট, ২০১২ দৈনিক সমকাল-এ প্রকাশিত)

